বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য পিসি রায়ের (প্রফুল্ল চন্দ্র) ৭৯ তম মহাপ্রয়ান দিবস দায়সারা ভাবে পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকেলে দিনটি উদযাপন উপলক্ষে তাঁর জন্ম ভিটায় স্থানীয় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, সংগঠনটির উদ্যোগে স্বল্প পরিসরের আয়োজন যখন চলছিল তখন তাঁর বসতভিটা ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এসময় গবাদি পশু বিচরণ করছিল বাসগৃহজুড়ে। সবাই যখন স্বল্প পরিসরের আয়োজনে ব্যাস্ত, তখন কারো নজর ছিলনা সেদিকে। বরেণ্য বিজ্ঞানীর মৃত্যুবার্ষিকীর এমন দায়সারা আয়োজন দু:খজনক বলেও মনে করেন অনেকে।
বিজ্ঞানীর গ্রামের বাড়ী রাড়ুলীতে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের সভাপতি হরেকৃষ্ণ দাশ। এসময় বক্তব্য রাখেন, দীপংকর বিশ্বাস, পঞ্চানন বিশ্বাস, সহকারী ভুমি কর্মকর্তা লতিফা আখতার, গনেশ হালদার, অমিত কুমার দাস, উত্তম কুমার দাশ, তপন পাল, কাজী মিজানুর রহমানসহ অন্যান্যরা।
প্রসঙ্গত, খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছার কপোতাক্ষ তীরবর্তী ছায়া সুনিবিঢ় রাড়ুলী গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগষ্ট আচার্য বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরী ও মাতা ভূবন মোহিনী দেবী।
তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, রসায়নবিদ, সমাজসেবক, সমবায় আন্দোলনের পুরোধা ও রাজনীতিবিদ। তিনি কলকাতার মানিক তলায় মাত্র ৮শ’ টাকা পুঁজি নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ঔষধ শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় লাখো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।
স্যার পিসিরায় দেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের মিল ও জন্মভূমি রাড়লীতে একমাত্র সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। একাধারে তিনি ২০ বছর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বৃটিশ সরকার তাকে ১৯৩০ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।
এছাড়া একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের মহিশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। বিজ্ঞানী পিসি রায় ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন পরলোক গমন করেন। চিরকুমার এ বিজ্ঞানী জীবনের অর্জিত সকল সম্পদ মানব কল্যাণে দান করে গেছেন। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী পিসি রায়ের জন্ম বার্ষিকী অনুষ্ঠান সরকারিভাবে পালন করা হলেও মৃত্যু বার্ষিকীর অনুষ্ঠান স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেই উদযাপন করা হয়।
এর আগে স্যারসরায় স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে পাইকগাছায় নির্মাণাধীন কৃষি কলেজকে বিজ্ঞানী পিসি রায়ের নামে নামকরণ এবং পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিতকরণ, বিজ্ঞানীর বসতবাড়ী সংরক্ষণ এবং পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন। পাঠ্যপুস্তকে বিজ্ঞানীর জীবনী সম্পর্কিত একটি বিশেষ অধ্যায় অন্তর্ভূক্ত করা, বিজ্ঞানীর মায়ের নামে উপমহাদেশের প্রথম ভূবন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয় এবং বিজ্ঞানীর নামের আর, কে, বি, কে হরিশ্চন্দ্র কলেজিয়েট ইনস্টিটিউশনকে ডিগ্রী কলেজ উন্নতিকরণ ও জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছে।
সর্বশেষ উপকূলীয় জনপদের সর্বস্তরের সাধারণের ধারণা, বিজ্ঞানীর জন্মস্থানকে কেন্দ্র করে পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানীর জীবনাদর্শ তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ১৬,২০২২//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post