২০২২ -২০২৩ শিক্ষাবর্ষে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ( ইবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সোহানুর রহমান সোহান। তিনি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৩৩৯৮ অবস্থান নিয়ে ইবির ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তার ইবিতে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সোহান কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে। তিনি যখন ৬ মাসের মাতৃগর্ভে, তখন তার বাবা মারা যান। মা মোছাঃ বিজলী খাতুন অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহান ছোট। বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই।
জানা গেছে, অর্থের অভাবে নবম শ্রেণি থেকেই পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয় সোহানের। সে সময় কুমারখালীর তৎকালীন ইউএনও মো. শাহীনুজ্জামানের সহযোগীতায় তিনি পড়াশোনা চালিয়ে নেন এবং যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাণিজ্যে বিভাগ থেকে ৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে ২০১৯ সালে এসএসসি পাশ করেন।
এরপর তৎকালীন আরেক ইউএনও রাজীবুল ইসলাম খানের সহযোগীতায় তিনি কুমারখালী সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ২০২১ সালে ৪ দশমিক ৪২ পয়েন্ট নিয়ে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
আরো জানা গেছে, ছাত্র হিসেবে সোহান খুব বেশি মেধাবী ছিলোনা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা তার অদম্য ইচ্ছে। সেই ইচ্ছে শক্তি থেকেই তিনি এলাকায় এক বড় ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করেন। প্রথম বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে ২০২২ -২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ৫৬ দশমিক ৫০ স্কোর নিয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ( ইবি) ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয়েছে তার।
এবিষয়ে ওই ছাত্র সোহানুর রহমান সোহান বলেন, বাবা কেমন জিনিস তা তিনি দেখেননি কোনোদিন। সারাজীবন তিনি দেখেছেন তার মাকে পরের বাড়িতে কাজ করতে। সেই কাজের টাকায় তাদের সংসার চলে। তাঁর মায়ের যা আয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ মিটিয়ে পড়াশোনা চালানো সম্ভব নয়। তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিত্তবানদের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, নবম শ্রেণি থেকেই অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিছিল। ইউএনও শাহীনুজ্জামান তার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে আজও।
তার মা বিজলী খাতুন বলেন, তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন। সেখান থেকে সামান্য যা পান, তা দিয়ে চলে সংসার। কিন্তু এই টাকা ছেলেকে ভার্সিটি পড়ানো তার সম্ভব নয়। তাঁর ভাষ্য, যদি কেউ সাহায্য করে, তাহলে পড়ানো সম্ভব। তাছাড়া তার পক্ষে সম্ভব হয়।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, সোহান খুবই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিষদের পক্ষ থেকে যতদুর সম্ভব তিনি সহযোগীতা করবেন। তবে সোহানের পাশে অন্যান্যদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২৪ জুলাই ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post