মোহাম্মদ সোহেল, ভূঞাপুর(টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের শত বছরের পলশিয়া রানী দিন মনি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইট নির্মাণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দিয়ে বর্তমান সভাপতির নামে নামকরণের অভিযোগ উঠেছে।
শহীদের নাম না দিয়ে ব্যক্তির নামে গেইট নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের প্রাত্তন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, এ উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯১৮ সালে হেমন্দ্র রায় চৌধুরী তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী পলশিয়া রানী দিনমণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ততকালীন ৫৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীনের সেই যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলো এই বিদ্যালয়ের শহীদ নজরুল ও শহীদ আমজাদ নামের দুইজন কিশোর। তাদের অবদান স্বরণীয় রাখতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের ইতিহাস জানানোর উদ্দেশ্যে গত ২০২১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমান ও তৎসময়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা রহিজ উদ্দিন আকন্দের স্বাক্ষরিত একটি আবেদন দেয়া হয়েছিলো স্থানীয় সাংসদ সদস্য ছোট মনির এমপির কাছে। যাতে এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাগণ অবগত থাকে। কিন্তু বর্তমান সভাপতি চাঁন মাহমুদ তালুকদার দায়িত্ব পাওয়ার পরেই মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের ইতিহাস মুছে ফেলার নীল নকশা করেছে বলে মনে করেন প্রাত্তন শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধারা। ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের দিয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে একটি গেইট নির্মাণ করে মূল ফটকে শহীদের নামের পরিবর্তে নিজ নাম “চাঁন মাহমুদ তালুকদার তোরণ” নির্মাণ করেন। যা দেখে মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও প্রাত্তন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানান। এমন অনিয়মের বিষয়টি বিভিন্ন মহলে জানাজানি হয় এবং গেট নির্মানের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানরে প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমানে সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২০২১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর পলশিয়া রানী দিন মনি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটটি নির্মাণে আমাদের শিক্ষার্থী দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করার কথা ছিল। তবে কেন বর্তমান সভাপতির নামে তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যে তোরণ নির্মাণ হচ্ছে সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না ।
তবে ভূঞাপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মজিদ মিয়া তীব্র নিন্দা জানান, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বিদ্যালয় হতে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঐ শহীদদের নামে একটি তোরণ নির্মাণ করার। তবে তোরণ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও নামকরণ করা হচ্ছে বিতর্কিত একজন ব্যক্তি চাঁন মাহমুদ তালুকদারের নামে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গেট নির্মাণের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন , তিনি আমাকে বলেছেন ব্যবস্থা নিতে। এলাকার অনেকে মনে করেন যে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক এর কারসাজিতে শহীদদের নাম চিরতরে মুছে ফেলার নীল নকশার অংশ।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//