মোহাম্মদ নাজিবুল বাশার, মধুপুর টঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার লাল মাটিতে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ পেঁপে উৎপাদিত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে আনারস চাষের জন্য খ্যাত মধুপুরে এখন পেঁপে চাষও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, অনুকূল আবহাওয়া, আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং কৃষকদের বাড়তি আগ্রহের ফলে চলতি মৌসুমে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
কৃষকরা জানান, লাল মাটিতে পেঁপে চাষে আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন হলেও ফলন ভালো হয়। একেক বিঘা জমিতে গড়ে ৫০-৬০ মণ পর্যন্ত পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ট্রাকে করে পেঁপে সরবরাহ করা হচ্ছে।
মধুপুরের মিজাবাড়ী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন কৃষি উদ্যোক্তা শাহাজামাল মিয়া ৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে টপলেডি জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। তার এই ৭ বিঘা জমির পেঁপে বাগানে খরচ হয়েছে ১০ লক্ষাধিক টাকা। খরচ একটু বেশি হলেও ২০ থেকে ২২ লক্ষ টাকা বিক্রির আশা করছেন এই কৃষক । বাগান থেকে ১ লক্ষ কেজি পেঁপে উৎপন্ন করেছি। প্রতি কেজি ২৫ টাকায় বিক্রি করেছি। বাজার ভেদে আরো বাড়তে পারে।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, আমার দায়িত্বরত এলাকা মিজাবাড়ী ইউনিয়ন, এখানে ছোট বড় মিলে ১২টি বাগান রয়েছে। প্রতিদিন এদেরকে তারদের সাথে কথা বলে নানা ভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি যাতে করে ফলন ভালো হয় ও অধিক দামে নিয়ে কৃষকেরা বিক্রি করতে পারে তা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্যমতে মধুপুরে এ বছর ১০৫৬ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। যা প্রায় ৩৫-৪০ মেট্রিক টন উৎপাদন সম্ভব। যার বাজার মূল্য দাড়াবে ৪ শত কোটি টাকা। পেঁপের এই সাফল্য মধুপুরের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। শুধু তাই নয়, কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে। তারা আশা করছেন, আগামীতে পেঁপে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে কৃষকের আয় আরও বাড়বে।
মধুপুরের মিজাবাড়ী, ভাইঘাট, ইদিলপুর, টেলকি, বেরিবাই, গারো বাজার, দোখলা, আলোকদিয়া, লাউফুলা, অরণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকার চাষিরা দেশীয় জাতের পাশাপাশি টপলেডি, গ্রীনলেডি, থাইসহ নানা জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। এখানকার প্রতিটি গাছ থেকে মেলে ৫০-৬০ কেজি পেঁপে। প্রতিটা গাছে খরচ হয়েছে ৩০০-৪০০ টাকা। বিক্রি করতে পারছি ১০০০-১২০০ টাকার মতো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান, মধুপুরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রচুর পরিমাণে পেঁপে চাষ হয়েছে। চারা রোপন থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। মধুপুরের তিন ধরনের পেঁপে উৎপাদন হয় টপ লেডি, রেড লেডি, শাহী সুইট লেডি, মধুপুরের টপ লেডি পেঁপে বেশি চাষ হয়। তিনি আরো বলেন, ১ বিঘায় প্রায় ৫০০-৬০০ গাছে ৪০০-৭০০ মন ফলন পাওয়া যায় আমরা এবং কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগণ প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে ভিজিট করছি। যাতে করে আরো বেশি পেঁপের ফলন বৃদ্ধি করা যায়। কৃষকরা এই ফসলটি আবাদে উৎসাহী হয়।
মধুপুরের কৃষকরা আনারসের পাশাপাশি পেঁপেকে অর্থকরী ফসল হিসেবে গ্রহণ করছেন। ফলে এই অঞ্চলের লাল মাটি এখন সত্যিই ফলের ভান্ডারে রূপ নিচ্ছে।

Discussion about this post