নাজিবুল বাশার, মধুপুর টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলের মধুপুরে শালবন পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত শালবনকে তার আগের রূপে ফিরিয়ে আনা এবং জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা এবং সরকার এই বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুনরুদ্ধার প্রকল্প শুধু বৃক্ষরোপণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি সমন্বিত উদ্যোগ যা পরিবেশের ভারসাম্য এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও ধারণা দেন টাঙ্গাইল বন বিভাগ ৯ জুলাই বিকেল ৫টায় মধুপুর উপজেলার দোখোলার রেঞ্জ প্রাঙ্গণে এক প্রেস বিফ্রিংয়ের আয়োজন করেন এতে সভাপতিত্ব করেন সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু সাহেল। প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মহসীন, বিশেষ অতিথি ছিলেন নারায়ন ভৌমিক, উপজেলা পরিসংখ্যান, টাঙ্গাইল।
এ বছর ৭৫০ একর জমিতে এবং আগামী তিন বছরে মোট ৬,৬১০ একর জমিতে শাল গাছ রোপণ করা হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শাল গাছের পাশাপাশি ৪০% সহযোগী দেশীয় প্রজাতির গাছও লাগানো হবে, কিন্তু কোনো বিদেশি প্রজাতির গাছ থাকবে না। এটি বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
মধুপুর শালবনে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনিসহ অন্যান্য বিদেশি প্রজাতির গাছগুলো পর্যায়ক্রমে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে বনের স্থানীয় প্রজাতির গাছগুলো বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরবে। বনের সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ পুরোদমে চলছে এবং কিছু এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এটি অবৈধ দখল রোধে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
এ প্রকল্পের সফলতার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করা হচ্ছে। বনবাসীদের হয়রানি বন্ধ এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে গারো সম্প্রদায়সহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বনবাসীদের বিরুদ্ধে করা ১২৯টি মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণাও এসেছে, যা আস্থা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে বনভূমি দখলের মামলা এবং বন কর্মকর্তাদের উপর হামলার মামলা এর বাইরে থাকবে।
মধুপুর বনের পরিবেশগত ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির পুশু পাখি এবং ময়ূর ও কচ্ছপ অবমুক্ত করা হচ্ছে। এটি বনের হারিয়ে যাওয়া প্রাণী প্রজাতিগুলোকে ফিরিয়ে আনতে এবং জীববৈচিত্র্য বাড়াতে সাহায্য করবে।
প্রকল্পটিকে সফল করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। অতীতে প্রাকৃতিক বন কেটে রাবার, কলা, আনারস পেঁপে চাষের কারণে শালবনের বড় একটি অংশ বিলীন হয়েছে। এছাড়াও, কিছু এলাকায় সুফল প্রকল্পর কারণে প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শত শত একর জমিতে হরমোন ও পেস্টিসাইড দিয়ে বাণিজ্যিক ফসল চাষ বন্ধ করার উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।এ প্রকল্পটি সফল হলে মধুপুরের শালবন শুধু তার হারানো ঐতিহ্যই ফিরে পাবে না, এটি দেশের সামগ্রিক পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই মহৎ উদ্যোগ সফল হতে পারে।

Print Date & Time : 11 July 2025 Friday 9:56 am