দেড়যুগ ধরে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের আনুগত্যের বলয় অটুট থাকলে এবার গাজায় ইসরাইলি হিংস্রতায় চরম নাখস সৌদিসহ আরব বিশ্ব ৷ রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্ক দিন দিন মজবুত হচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিগুলোকে সমান হিসেবে বিবেচনা করায়, তাদের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক গভীর হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ফিকে হয়ে আসছে পশ্চিমা আধিপত্য, প্রভাব বাড়ছে চীন-রাশিয়ার। কয়েক দফা সফর করে হতাশার রেখা মার্কিনিদের কপালে।
সম্প্রতি মস্কো সফরের সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যে বৈঠকে পারস্পরিক শ্রদ্ধার পাশাপাশি পশ্চিমাদের দূরে ঠেলে একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। পুতিন গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার পাশপাশি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
এছাড়া অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে তেহরানের যোগদান আগামী বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। তবে ইরানই কেবল একমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ নয়, যেটি মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী দুই মিত্র। এই দেশ দুটির সঙ্গেও রাশিয়ার ভালো সম্পর্ক। তুরস্কের মতো তারাও রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে।
বৈশ্বিক ব্যবস্থায় রাশিয়ার গুরুত্ব এবং অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার অর্থ হলো তারা যে কোনো বিষয়ে একটি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এরইমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ সৌদি আরবকে আরও তেল উৎপাদনে রাজি করার চেষ্টা চালালেও, দেশটি উৎপাদন আরও কমিয়ে দিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকে বসার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ইরান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তেহরান এবং মস্কোতে প্রায়ই সফর করেছেন। তবে পরিবর্তিত সময়ে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের আধিপত্য যখন ফিকে হয়ে আসছে, সেই সময়ে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের তাৎপর্য অনেক বেশি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইব্রাহিম রাইসি এবং পুতিনের বৈঠকে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মতো মধ্যপ্রাচ্যসম্পর্কিত বিষয়ে সফল সহযোগিতার মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান-রাশিয়া যেভাবে সম্পর্ক মজবুত করেছে, ঠিক একই কায়দায় গাজা ইস্যুতে এক হতে পারে রাশিয়া ও ইরান। বিশেষ করে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে তেহরান ও মস্কো।
গত কয়েক বছরে ইরান এবং রাশিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্কও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। তাই ইরান সামরিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে চাইছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে আসন্ন দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর একটি প্রধান বিষয় হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি ইরান থেকে রাশিয়ায় যেসব পণ্য রফতানি করার কথা এবং ইরান রাশিয়া থেকে যে পণ্য আমদানি করতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//