এনামুল হক, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া কুমারখালীতে একটি বাসার ফ্রিজ থেকে মাংস চুরির অভিযোগ তুলে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধর এবং মাথার চুল কেটে গ্রামের রাস্তায় ঘুরিয়ে
নিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে গ্রাম্য সালিসের নামে মব ভায়োলেন্স করে ওই নারীর বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু-ছাগল ও স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতিত রিনা খাতুন নামের ওই ঐ নারী স্থানীয়
বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী।
এঘটনায় ভিকটিম রিনা খাতুন বাদি হয়ে ৬জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কুমারখালী থানায় করা মামলার এজাহার নামীয় ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে ওসি (তদন্ত) আমিরুল
ইসলাম।
তিনি জানান, চুল কর্তনের অভিযোগে এজাহার নামীয় যে ৩জন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী
লিপি খাতুন।
বুধবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত আসামীদের ছাড়িয়ে নিতে কিছু
সংখ্যক লোকজন থানার সামনে ভীড় জমিয়েছিলেন বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুরে ঘটে এ ঘটনা। এঘটনায় নির্যাতিত রিনা খাতুন বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে
পড়ে। ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের দাবি, ‘সোমবার বিকেলে রিনা খাতুন প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলো। এসময় টের পেয়ে বাড়ি গৃহকর্তী মুক্তি খাতুন তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে। সংবাদ পেয়ে রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর এসে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানায়, ‘স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনের নেতৃত্বে কয়েকশ নারী-পুরুষ সোমবার রাত ৮টার দিকে রিনার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর
করে এবং রিনাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং ঘটনাস্থল ওই ফ্রিজওয়ালা রিপনের বাড়িতে নিয়ে এসে রিনাকে আবারও ব্যাপক মারধর করে মাথার চুল কেটে দেয়। পরে সেখানে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য
মো. শাহ আলমের নেতৃত্বে সালিশ বসিয়ে মাংশ চুরির জরিমানা হিসেবে নির্যাতিত রিনার দুটা গরু, একটা ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গতকাল (১০ জুন) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর আহত রিনা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে এবং মাথার চুল কাটা।
এসময় নির্যাতিত ওই নারী অভিযোগ করেন, ‘প্রতিবেশী রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। সোমবার বিকেলে রিপনকে ডাকতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন বাড়ির কাজ করানোর জন্য। কিন্তু রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন
নিয়ে রিপন আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করে। এসময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি ও পারভিন তার মাথার চুল কেটে দেয়। ঐ নারী জানান, বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে
আমার স্বামী পালিয়েছেন। আমি এর বিচার চাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাবপত্র ভাঙচুর। গোয়ালঘরে
নেই গরু-ছাগল। তবে মুঠোফোনে আলাপকালে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন জানায়, তার ঘর থেকে টাকা চুরি করে পালানোর সময় রিনা হাতে নাতে ধরা পড়ে। রিনা এর আগেও এলাকার
বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। সেই রাগেই লোকজন রিনাকে ধরে মারধর করে চুল কেটে দিয়েছে।
অভিযুক্ত রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন স্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুধু দড়ি দিয়ে বেঁধে শুধু একটা চর থাপ্পর মারিচি। কিন্তু চুল কাটেচে কারা তা আমি দেখিনি। ঘটনায় জড়িত অপর অভিযুক্ত কাশেম দাবি করেন, ‘রিনা এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করে। সেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওইদিন রাতেই সালিশে নেয়া সিদ্ধান্তে রিনার
গরু-ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসব বিষয়ে মেম্বরের সাথে কথা বল্লিই সব
জানা যাবি। তবে রিনার বাড়ি থেকে গরু-ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য
মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থল থেকে শুধু ওই নারীকে উদ্ধার করে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। পরে আর কি ঘটেছে তা আমার জানা নেই। এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহসহ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এঘটনায় বাদির দেয়া এজাহার নামীয় ৩জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে।

Discussion about this post