মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের বাধা মন্ত্রণালয় ও হাই কমিশন । তাদের অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করে পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিলম্বিত করে ফেলছে। মন্ত্রণালয়ের এধরনের কর্মকান্ডের ফলে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে এমন একটি বার্তা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর/মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের বিষয়ে এখনও প্রস্তুত নয় বা তারা খুব একটা আগ্রহী নয়।
মালয়েশিয়া মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ভাষ্যমতে ১৫ জুন, ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ২,৩০,০০০ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় ডিম্যান্ড লেটার ইস্যু করেছে। যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের পাওয়ার কথা হলেও ঢিলেঢালা কর্মকান্ড এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে পার্শবর্তী দেশ নেপাল সহ অন্য ১২ টি সোর্স কান্ট্রিতে চলে যাবে।
দুই দেশের সমঝোতার ভিত্তিতে মালায়েশিয়া শ্রমিক পাঠানোর পথ এখন উন্মুক্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও মালায়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে মালায়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশীদের জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এবছরের ০২ জুন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্ৰুপের মিটিং এ উভয় দেশের প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সাথে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে একমত হয়। মিটিং এর সিদ্ধান্ত সমূহ উভয় দেশের প্রতিনিধিদল সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হবে।
মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা দূতাবাসে ডিম্যান্ড লেটার জমা দিয়েছেন। এখন হাই কমিশনের কাজ হলো নিয়োগকারীগণের কোম্পানি প্রোফাইল যাচাই-বাছাই করা। তাদের কোম্পানী/ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করা। কোম্পানী গুলো যদি সঠিক থাকে তাহলে শ্রমিকের প্রকৃত চাহিদা নিরূপনান্তে ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যায়ন পূর্বক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো। মন্ত্রণালয় মেডিকেল ও আনুষাঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট এজেন্সীকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য অনুমতি দিবে। এরপর কর্মী পাঠানো শুরু হবে।
এসব না করে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন বলছে ডিম্যান্ড লেটার সত্যায়নের পূর্বেই মেডিকেল সেন্টার নির্বাচন করতে। মন্ত্রণালয় ওইসব মেডিকেল সেন্টার গুলোকে অনুমোদন করবে। মেডিকেলের রিপোর্ট হাই কমিশনের অনলাইন মডিউলে অন্তর্ভূক্তকরণ করতে হবে। অন্যদিকে মন্ত্রণালয় তালিকা চুড়ান্ত করছে না।
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এরপর আজ পর্যন্ত ০৬(ছয়) মাস পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় এখনো মেডিকেল সেন্টারের ব্যাপারে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি।
মালয়েশিয়া সরকার ঢাকা হতে তথ্য যোগাড় করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং নবায়নকৃত মেডিকেল সেন্টারের মনোনয়ন দিয়েছে। সেটি তাদের সিস্টেমে ইনস্টল করে মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে সংযুক্ত করেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এখন নতুন করে মেডিকেল সেন্টার অনুমোদনের কাজে হাত দিলে পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক পিছিয়ে যাবে। আবার মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারের স্থলে নতুন মেডিকেল সেন্টার সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিবে।
মালয়েশিয়া সরকারের নির্ধারিত সিস্টেম প্রোভাইডার কর্তৃক মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে ডিম্যান্ড লেটার, চুক্তিপত্র সত্যায়ন সহ অভিবাসন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সফ্টওয়্যার ও ইকুইপমেন্ট ইনস্টল করেছে। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথেও তাদের মডিউলের সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে অনেক আগেই তারা প্রস্তাব দিয়েছে। এসবের কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ডাটা ব্যাংক এর মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে বাধ্যকতা, কখনও Random Sampling আবার কখনও বা মালয়েশিয়ার কাছে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিস্টেম সমন্বয় করার প্রস্তাব করছে।
এভাবে হাই কমিশন এবং মন্ত্রণালয় অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করে পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিলম্বিত করে ফেলছে। মন্ত্রণালয়ের এধরনের কর্মকান্ডের ফলে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে এমন একটি বার্তা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর/মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের বিষয়ে এখনও প্রস্তুত নয় বা তারা খুব একটা আগ্রহী নয়।
অনুমোদিত ২৫রিক্রুটিং এজেন্সি প্রয়োজন মনে করলে মালায়েশিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ ১৪ টি দেশের যে কোন দেশ থেকে কর্মী পাঠাতে পারবে। বাংলাদেশের মন্ত্রণালয় এবং হাইকমিশনের নতুন শর্তারোপের ফলে মালয়েশিয়ার ডিম্যান্ড লেটার সমূহ পার্শবর্তী অন্যান্য দেশে চলে যেতে পারে।
দু’দেশের মধ্যে সবকিছু চুড়ান্ত হওয়ার পরও জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারটি হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং দেশের সার্বিক স্বার্থে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃক ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যায়ন শুরু করা আবশ্যক। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় হতে হাই কমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। আর এসব না করলে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর উদ্যোগে ফিরে পাওয়া মালায়েশির শ্রমবাজারের ফসল ফাইলেই নি:শেষ হয়ে যেতে পারে। এমনটি হলে তা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য চরম দু:সংবাদ।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ২১,২০২২//
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ২১,২০২২//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post