মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা :
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কিশোর গ্যাং-বাইকার গ্রুপসহ অপরাধীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছেন পুলিশ।
দ্বিতীয় বারের মত এমপি নির্বাচিত হয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রনে খান আহমেদ শুভ এমপি কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন।
তিনি ঘোষনা দিয়েছেন এলাকার বখাটে, কিশোর গ্যাংক-বাইকার গ্রুপ, মাদক কারবারী, ভুমিদস্যু, অবৈধ মাটি কাটার সঙ্গে যারা জড়িত, চাঁদাবাজ ও ইভটিজারসহ অপরাধীদের কোন অবস্থায় ছাড় দিবেন না। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং মাদক নির্মুলসহ কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এমপির এমন কঠোর বার্তায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এলেও ভুক্তভোগি এলাকাবাসি এমপির এই কঠোর বার্তা বাস্তবায়ন দেখতে চান।
আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) মির্জাপুর উপজেহলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে অপরাধীদের সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসি অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়রি) সাঁড়াশি অভিযানের সময় উপজেলা সদরের এস কে পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের গলি থেকে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার পুত্রসহ ১০-১২ জন উঠতি বয়সের বখাটেকে পুলিশ আটক করে।
এ সময় তাদের ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সঙ্গে দূর্ব্যবহার ও বাকবিতন্তায় জড়িয়ে পরেন কয়েকজন নেতা। এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে অভিভাবকগনের মুচেলিকায় জিম্মায় তাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
একই দিন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলা সদরের পৌনসভার এক রেস্টুরেন্ট অভিযান চালিয়ে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ৮-১০ শিক্ষার্থীকে আটক করেন পুলিশ। পরে তাদেরও অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
এলাকায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বখাটেরা বাইক নিয়ে অপরাধ করে সহজেই সটকে পরেছে। সড়ক মহাসড়কে দল বেঁধে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, মাদক ব্যবসা, গরু চুরি এবং অপহরণসহ সমাজের নানা অপরাধের সঙ্গে এই গ্রুপের সদস্যরা জড়িত।
মির্জাপুরে অপরাধ নিয়ন্ত্রনে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার কঠোর বার্তা দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
এসপির নির্দেশনায়সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ( মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেল) এএসএম আবু মনসুর মুসা, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম, ওসি (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিনসহ এবং থানা পুলিশ অপরাধীদের ধরতে পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিসহ বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন। পুলিশের এমন কঠোর নজরদারীতে অপরাধীরা অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে এবং গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে বলে পুলিশ সুত্র জানিয়েছেন।
এদিকে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই মির্জাপুর উপজেলায় কিশোর গ্যাং ও বাইকার গ্রুপের অপরাধ বেড়ে গেছে। মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ভাতগ্রাম, ওয়ার্শি, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, গোড়াই, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল এই ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে কিশোর গ্যাংও বাইকার গ্রুপের সদস্যরা নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। একটি বাইকে ৩-৪ জন উঠে রাস্তা দখল করে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। এই ফাঁকে নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে ছিনতাই, ডাকাতি করে সটকে পরে। গুরুত্বপুর্ন রাস্তার মোড়, স্কুল-কলেজের সম্মুখ, হাইওয়ে রোড, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং বাসাবাড়ির সামনে এদের আড্ডা চলে। পৌরসভার মির্জাপুর এস কে পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশ, থানা রোড, বাওয়ার রোড, শহীদ মিনার রোড, পুরাতন বাস স্টেশন, মির্জাপুর বাইপাস, বাইমহাটি প্রফেসরপাড়া, কালিবাড়ি রোড, পোষ্টকামুরী জহুরবাড়ি মোড, ডাক বাংলো, সওদাগড়পাড়া, মির্জাপুর ট্রেন স্টেশন, গোড়াইল, বাওয়ার কুমারজানি, কুতুব বাজার, মির্জাপুর বাবু বাজার, সরিষাদাইর, ঢাকা-টাঙ্গাইল মাসড়কের বিভিন্ন স্পট কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের আস্তানা।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাং-বাইকার গ্রুপসহ মাদক ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাইকারসহ বখাটেদের আটক করা হয়। পরে অভিভাবকসহ রাজনৈতিক দলেল নেতাদের জিম্বায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অপরাদের সঙ্গে যাদের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যাবে কোন অবস্থায় তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। মির্জাপুর থানা পুলিশের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post