মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলে মির্জাপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজছাত্র ইমন (১৮) হত্যা মামলায় সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. বাদশা মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে গোপন সংবাদ পেয়ে মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানি এলাকা থেকে বাদশা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয় বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোকাম্মেল এবং মির্জাপুর থানার এসআই মো. জহিরুল ইসলাম জহির নিশ্চিত করেছেন।
বাদশা মিয়া ১ নং মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ও মহেড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা।
৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আজ শনিবার টাঙ্গাইল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে মির্জাপুর থানা পুলিশ উল্লেখ করেন।
ছাত্র ইমন হত্যা মামলায় আসামি সাবেক দুই মন্ত্রী ও সাত এমপিসহ আওয়ামীলীগের ৫০০শ নেতা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
আজ শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মির্জাপুর থানায় দায়ের করা মামলার বিবরনে জানা গেছে, এই হত্যা মামলায় টাঙ্গাইলের সাবেক দুই মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, তানভীর হাসান ছোট মনি, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, ছানোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, আমানুর রহমান খান রানা ও অনুপম শাজাহান জয়, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত এবং ছয় জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর গ্রেফতার আতংকে পলাতক আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
পুলিশ জানায়, নিহত ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন মন্ডল বাড়ী এলাকার জুলহাস মিয়ার ছেলে। তিনি অলোয়া মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। ইমন গোড়াই এলাকায় একটি পোষাক কারখানায় কাজ করতেন। গত ৪ আগস্ট বিকেলে গোড়াই হাইওয়ে থানায় একদল দুস্কৃতিকারী হামলা করে। এসময় ওই স্থানে শান্তিপুর্ণ সমাবেশ করছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। দুস্কৃতিকারীরা থানা ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের সাথে দুস্কৃতিকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় ইমন পেটে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৮ আগস্ট ভোরে সে মারা করেন।
মামলার অন্য উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল ইসলাম আলমগীর, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাইফুজ্জামান সোহেল, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভর ব্যক্তিগত সহকারী ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মীর আসিফ অনিক, হংকং প্রভাসি সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল মামুন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মীর আসিফ অনিক, টাঙ্গাইল জেলা যুব লীগের সহসম্পাদক মঈন হোসেন রাজীব, মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সেতাব মাহমুদ, গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হুমায়ুন কবীর, আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া, ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল এবং আনাইতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ময়নাল হক।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত মো. মোশারফ হোসেন বলেন, নিহত কলেজ ছাত্র ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০২/১১৪/৩৪ ধারায় ১৫৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০/৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মির্জাপুর থানার মামলা নং ০৯ তারিখ-২২/০৮/২৪। মামলার পর আসামীদের গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগন কাজ করছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে মো. বাদশা মিয়া নামে সাবকে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post