মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
লৌহজং নদীর তীব্র ভাঙ্গনে এক সময়ের দেশ সেরা বিদ্যাপিঠ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাটী নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় ( বিএনবি উচ্চ বিদ্যালয়) বিলিন হতে চলেছে।
বিদ্যালয়ের ৬০০ শতাধিক শিক্ষার্থী আতংকের মধ্যে রয়েছে। তীব্র ভাঙ্গনে ঝুঁকির মধ্যেও পাঠদান অব্যাহৃত রেখেছেন বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে বিদ্যালয়টিকে রক্ষার জন্য ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসি।
আজ রবিবার (২৪ আগস্ট) বিদ্যালয়ের ভয়াবহ ভাঙ্গনের চিত্র দেখা গেছে। বিদ্যালয় কতৃপক্ষ জানায়, প্রায় ৬ একর বিশাল জায়গা নিয়ে ১৯৪৮ সালে মনোরম পরিবেশে বরাটী নরদানা পাকিস্তান নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
নরদানা, বাংগল্লা, বরাটী, উফুলকী, শুভুল্লা, ধল্যা, রুহিদপুর, ইচাইল, ভাতগ্রাম, বানাইল ও বানিয়ারা এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও সমাজসেবক মিলে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তন করে বরাটী নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় নাম করা হয়। ১৯৪৮ সালে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন সৈয়দ রিদওয়ানুর রহমান। তিনি অবসরে যাওয়ার পর ১৯৫১ সালে বিদ্যালয়টির হাল ধরেন শিক্ষানুরাগী প্রধান শিক্ষক বাবু দুঃখীরাম রাজ বংশী। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দিনে তিনি বিদ্যালয়টিকে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনসহ আমুল পরিবর্তন করেন। তার সময়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৭০০শ জন। তার অক্লান্ত শ্রমের ফলে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা, জুনিয়র ও এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলা, জেলা, অঞ্চল ও বিভাগীয় পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর বহন করে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাকির হোসাইন মিঞা ও রীনা রাণী গোষ্মামী বলেন, ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৬০০শ জন। পড়াশোনার মানও সন্তোষ জনক। বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী দেওয়ান শওকত আকবর ও শাজাহান খলিফা বলেন, শিক্ষকমন্ডলী, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষার্থীদের সমন্মিত প্রচেষ্টা ও সার্বিক সহযোগিতায় শিক্ষার মানউন্নয়ন, সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলায় বিদ্যালয়টির সুনাম রয়েছে। বিদ্যালয়ের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লৌহজং নদী (খাগজানা নদী)। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলে বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। নদী ভাঙ্গনে ইতি মধ্যে প্রধান শিক্ষকের বাস ভবনসহ ৬-৭ টি ভবন বিলিন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি নতুন ভবন দক্ষিণ দিকে মাঠের মধ্যে নির্মান করা হয়। দিন দিন নদী ভাঙ্গনে বিদ্যালয়ের ৫-৬ টি আধা কাঁচা টিনের ঘর, ছাত্রদের আবাসিক ভবন, মসজিদ ও জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা হুমকির মুখে পরেছে। অত্যন্ত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে যাচ্ছে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (২৩ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম, ৮ নং ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান মো. আজাহারুল ইসলাম আজাহার এবং উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও তিন নং ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শুভাশিষ কর্মকার বিদ্যালয়ের পাশে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্মন করেছেন। বিদ্যালয়টিকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য ব্লক দিয়ে গাইড বাঁধ নির্মানসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসি ও অভিভাবকগন জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল বলেন, বরাটী নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় একটি দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলাফলের দিক দিয়ে বিদ্যালয়টি একাধিক পুরষ্কার পেয়েছে। নদী ভাঙ্গনে বিদ্যালয়ের বেশ কিছু জমিসহ ভবন বিলিন হয়েছে। এখন নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় ৬০০ শতাধিক শিক্ষার্থী ঝুঁকির মধ্যে পাঠদান করে আসছে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য বিষয়টি তিনি প্রশাসনকে জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মানসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বরাটী নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় একটি আদর্শ ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর সার্বিক ফলাফল সন্তোষজনক। এখন মুল সমস্যা হচ্ছে বিদ্যালয়ে লৌহজং নদীর তীব্র ভাঙ্গন। বিষয়টি বিদ্যালয় কতৃপক্ষ অবহিত করেছেন। খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়ের পাশে নদী ভাঙ্গন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ ও বরাদ্ধ প্রাপ্তি সাপেক্ষে নদী বাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Discussion about this post