মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
বিয়ের প্রলোভনে চায়না আক্তারকে হত্যার ঘটনায় দুই বছরেও মামলার জট খুলেনি এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত খুনিরা কেউ গ্রেফতার হয়নি।
কন্যা হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে অবশেষে মারা গেলেন ৮৭ বছরের বৃদ্ধা বিধবা সাবজন বেগম। খুনি চক্র ও প্রভাবশালীদের চাপে সাবজান বেগম চার কন্যা মিনা, বেদানা, আন্না ও রওশনারা রচনাসহ পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তারা আরও অভিযোগ করেচেন, সিআইডির তদন্তকারী অফিসার মো. সুজন মিয়া আসামি পক্ষের সঙ্গে যোগসাজস করে চাঝ। চর্যকর মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১৩ নং বাঁশতৈল ইউনিয়নের বংশীনগর (চান্দের চালা) এ অমানবিক চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে গত ২০২২ সালের (৬ এপ্রিল)। এলাকাবাসি ও চায়না আক্তারের অসহায় পরিবার হত্যার মুল রহস্য উৎঘাটন এবং খুনিদের গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) খুনের শিকার চায়নার বড় বোন রওশনারা আক্তার রচনা বিস্তারিত তুলে ধরেন।
জানা গেছে, চায়না আক্তার (২৭), পিতার নাম মৃত ইয়াদ আলী, গ্রামের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার ১৩ নং বাঁশতৈল ইউনিয়নের বংশীনগর (চান্দের চালা গ্রামে)।
চায়না আক্তারের বোন রওশনারা রচনা জানান, বংশীনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে তাহেজ উদ্দিন (৪০) বিয়ের প্রলোভনে দীর্ঘ দিন ছোট বোন চায়নার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনা জানাজানি হলে চায়না আক্তার বিয়ের জন্য তাহেজ উদ্দিনকে চাপ দেয়। গত ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল কৌশলে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে চায়নাকে তাদের বাড়ি নিয়ে তাহেজ উদ্দিন, তার স্ত্রী হনুফা বেগম, ইন্নছ আলী, তার স্ত্রী তারা ভানু, হিকমত, তার স্ত্রী লিপি, রবিউল, তার স্ত্রী লিলি, চান্দে, তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও তাদের সহযোগিরা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। হত্যার দুই দিন পর চায়নার লাশ পার্শ্ববর্তী গজারির বনে পাওয়া যায়। চায়নার লাশ স্থানীয় লোকজন দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গজারির বন থেকে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করে। ময়না তদন্তে রিপোর্টে চায়নাকে অমানষিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কাগজপত্র দেখে জানা গেছে ময়না তদন্তে রিপোর্টেও সরাসরি হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে চায়না হত্যার সঙ্গে জড়িত মুল পরিকল্পনাকারী তাহেজ উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের পুলিশ ও র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করে।। চায়নাকে হত্যার ঘটনা ফাঁস ও গ্রেফতার থেকে বাঁচতে মুল ঘাতক তাহেজ উদ্দিন বিষপানে আত্নহত্যা করে। তাহেজ উদ্দিন আত্নহত্যা করলেও তার পরিবার কোন প্রতিবাদ বা অভিযোগ করেনি। এতে প্রমানিত হয় চায়না হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী তাহেজ উদ্দিন। হত্যার সঙ্গে জড়িত তাহেজের স্ত্রী হনুফা বেগম, তার ভাই ইন্নছ আলী, তার স্ত্রী তারা ভানু, বোন লিলি ও তার স্বামী রবিরুলসহ সন্দেহজনক একাধিক খুনিকে পুলিশ আজও গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ করেছে চায়নার অসহায় পরিবার। মুল ঘটনা চাপা দিতে হত্যাকারীরা অসহায় পরিবারকে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালীদের মধ্যে আবুল মেম্বার, মোকলেছসহ ৬-৭ জন চায়নার হত্যাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য পুলিশের সহায়তার নানা ভাবে কারসাজি করছে। থানায় মামলা হলেও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। চায়না হত্যার স্বাক্ষী দেওয়ায় আসামীরা জব্বার মিয়া ও তার স্ত্রী রিনাকে রাস্তায় মারপিটের চেষ্টা করে। হিকমত আলী ও তার প্রেরিত লোকজন মামলা পরিচালনা কারী রওশনারা রচনাকে মারার জন্য রাতের আধারে ঐ বাড়িতে তাদের ভয়ভিতি দেখায়। নিরাপত্তাহীনতার কারনে মামলার বাদী ও তার কন্যা ঘর পাকা করে। ঘটনাটি পুলিশ ও সিআইডিকে জানালে তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। চার কন্যা নিয়ে চরম নিরাপত্তা হীনতার মধ্যেও মামলার বাদী দরিদ্র ও অসহায় বিধবা সাবজান বেগম পুলিশ সুপার, স্থানীয় এমপিসহ মাতাব্বরদের দ্ধারে দ্ধারে গত দুই বছর ঘরছেন। কোন বিচার না পেয়ে কন্যা হত্যার শোকে অবশেষে মারা গেছেন ২৫ ফেব্রুয়ারি। একন মামলার দেখবাল করছেন অসহায় সাবজান বেগমের কন্যা ও চায়নার বড়বোন রওশনারা। চায়নার অসহায় পরিবার প্রধান মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে খুনিদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে চায়না খুনের মুল পরিকল্পনাকারী বিষপানে নিহত অভিযুক্ত তাহেজ উদ্দিনের পরিবার এবং অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি। তবে মুল ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ ও সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সাকাওয়াত হোসেন বলেন, চায়না খুনের পর তার মা সাবজান বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। ঘটনা তদন্ত করে সন্দেহ জনক আসামীদের নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। মামলায় সন্দেহ ভাজন আসামী তাহেজ উদ্দিন বিষপানে আত্নহত্যার পর মামলা অধিক তদন্তের জন্য সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী সাবজান বেগমের মৃত্যুর পর মামলা পরিচালনাকারী তার কন্যা রওশনারা রচনা বলেন, সিআইডির তদন্তকারী অপিসার সুজন মিয়া মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসামীদের সঙ্গে যোগসাজস করে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মিথ্যা রিপোর্ট দেওয়ায় ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে প্রতিবেদন ফিরে এসেছে। আমরা সিআইডির তদন্তকারী অফিসার সুজন, মামলার আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে সিআইডির পরিদর্শক এসআই মো. সুজন মিয়া বলেন, পুলিশের নিকট থেকে মামলা গ্রহনের পর চায়না হত্যার রহস্য উৎঘাটন, খুনিদের চিহ্নিত এবং অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ বলেন, মামলার বাদী অত্যান্ত গরীব, নিরীহ ও অসহায় পরিবার। চায়না হত্যার রহস্য উৎঘাটনসহ খুনিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post