মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বাইকার গ্রুপের হাতে পথচারি ও এলাকাবাসি জিম্মি হয়ে পরেছে।
গ্রামে ও পাড়া-মল্লায় বাইকার গ্রুপের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়তই বাইকার গ্রুপের সদস্যরা জোট বেঁধে এলাকায় নানা অপরাধমুূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেছে। বাইক নিয়ে অপরাধ করে সহজেই সটকে পরেছে।
এলাকার আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে দল বেঁধে বেপরোয়া ভাবে মোটর সাইকেল চালানো, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত এবং তুচ্ছ ঘটনায় গ্রুপে গ্রুপে মারামারিসহ সমাজের নানা অপরাধের সঙ্গে এই গ্রুপের সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিনিয়তই নানা অপরাধ হওয়ায় আতংকে এলাকাবাসি।
আজ রবিবার (২০অক্টোবর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে বাইকার গ্রুপের সদস্যদের এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই মির্জাপুরে বাইকারগ্রুপের অপরাধ বেড়ে গেছে। মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ভাতগ্রাম, ওয়ার্শি, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, গোড়াই, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল এই ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে বাইকার গ্রুপের সদস্যরা ভাগ হয়ে নানা অপরাধ করে যাচ্ছে।
থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলায় ২৩১ টি গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে গড়ে ৩০ টি করে মোটর সাইকেল রয়েছে। এতে মোটর সাইকেল সংখ্যা দাড়ায় ৬ হাজার ৯৩০ টি। সবচেয়ে বেশি মোটর সাইকেল মির্জাপুর পৌরসভা এবং গোড়াই শিল্পাঞ্চলে। এসব বাইকার গ্রুপের চালকদের ড্রাইবিং লাইলেন্স ও মোটর সাইকেলের নেই বৈধ কোন কাগজপত্র। হাতেগোনা দু, চারটির বৈধ কাগজপত্র থাকলেও বেশির ভাগ নেই কোন বৈধ কাগজপত্র।
অপরাধ করে দ্রুত সটকে পরছে। ফলে সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। একটি বাইকে ৩-৪ জন উঠে রাস্তা দখল করে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। গুরুত্বপূর্ন রাস্তার মোড়, স্কুল-কলেজের সম্মুখ, হাইওয়ে রোড, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং বাসাবাড়ির সামনে এদের আড্ডা চলে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্তত ১০ জন নারী পুরুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার মির্জাপুর এস কে পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশ, থানা রোড, বাওয়ার রোড, শহীদ মিনার রোড, পুরাতন বাস স্টেশন, মির্জাপুর বাইপাস, বাইমহাটি প্রফেসরপাড়া, কালিবাড়ি রোড, পোষ্টকামুরী জহুরবাড়ি মোড, ডাক বাংলো, সওদাগড়পাড়া, মির্জাপুর ট্রেন স্টেশন, গোড়াইল, বাওয়ার কুমারজানি, কুতুব বাজার, মির্জাপুর বাবু বাজার, সরিষাদাইর, ঢাকা-টাঙ্গাইল মাসড়কের ১০-১২ টি স্পট বাইকার গ্রুপের সদস্যদের আস্তানা রয়েছে। বাইকার গ্রুপর সদস্যদের পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, জুয়া ও মাদক ব্যব্সা জমমজাট।
মির্জাপুর উপজেলা সদরের মির্জাপুর সাহাপাড়া, কুতুববাজার, কান্ঠালিয়া, পাহাড়পুর, প্রফেসরপাড়া, পালফাড়া, বাইমহাটি, গোড়াই ও ছাওয়ালীসহ বিভিন্ন স্পটে জুয়া ও মাদকের জমজমাট ব্যবসা। এদের অত্যাচারে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলারদিন দিন অবনতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন। শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারী কলেজের ইংরেজী বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ এবং বেসরকারী সামাজিক সেবা সংস্থা রেনেসাঁ মির্জাপুরের সভাপতি ও ব্যবসায়ী মো. আল মাসুম কবীর আলমাস অভিযোগ করেন, স্কুল কলেজগামী এবং বখাটেরা বাইকার গ্রুপের সঙ্গে জড়িত।
এই গ্রুপের সদস্যদের হাতে এলাকাবাসি জিম্মি হয়ে পরেছে। তাদের বেপরোয়া চলাফেরায় স্কুল কলেজের ছাত্রীরা চলারোরা করতে পারছে না। প্রতিনিয়তই ছাত্রীদের উত্তক্ত ও ইভটিজিং করে যাচ্ছে। অভিভাবকগন এই চক্রের হাতে অসহায়। প্রশাসনকে এদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার তারা অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেছেন, অবৈধ মোটর সাইকেলসহ বাইকার গ্রুপের সদস্যদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ বাইকার গ্রুপের সদস্যদের ধরতে বিভিন্ন এরাকায় টহল দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি মাদক কারবারি ও বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অপরাদের সঙ্গে যাদের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যাবে কোন অবস্থায় তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম ও এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান বলেন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্ময় করে মির্জাপুর উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা শান্তিপুর্ন রাখার জন্য প্রশাসন থেকে মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া ও বহিরাগত বাইকার গ্রুপের সদস্যদের ধরতে তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল জরিমানা করছেন। অভিভাবকদের সচেতন করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযান চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

Discussion about this post