Print Date & Time : 27 August 2025 Wednesday 9:32 pm

মির্জাপুরে ভুমি খেকোদের পেটে যাচ্ছে টিলার লাল মাটি

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পাঁচটি ইউনিয়নে ভুমি খোকোদের পেটে যাচ্ছে পাহাড়ের লাল মাটি।

ভুমি খোকোদের কাছে পাহাড়ের এ লাল মাটি যেন সোনার খনিতে পরিনত হয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে লাল মাটির পাহাড় কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ফলে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র ও বনজ সম্পদ। পাহাড়ের লাল মাটির পাশাপাশি চক্রটি বিশেষ কায়দায় নদী ও তিন ফসলি জমি থেকে দিন রাত মাটি এবং বালি চুরির চুরির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনের কঠোর নজরদারী এবং জেল জরিমানার পরও পাহাড়, নদী ও ফসলি জমি থেকে অবৈধ ভাবে মাটি চুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক চলাচল করায় এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাটের যেমন ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশও হুমকির মুখে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই চক্রের কাছে নিরুপায় হয়ে পরেছেন উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটি ও উপজেরা পরিষদের মাসিক সভায় অবৈধ মাটি কাটা বন্ধের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ করেছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিবার পাহাড়ের টিলা থেকে মাটি কাটা বন্ধের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং জেল জরিমানাও করেছেন। তারপরও অবস্থার পরিবার্তন হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ রবিবার (৫ মে) মির্জাপুর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে চক্রটি লাল মাটি কেটে নিচ্ছে। পাহাড়ি ইউনিয়নগুলো হচ্ছে গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা, বাঁশতৈল এবং তরফপুর। মির্জাপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, পেকুয়া, মুচিরচালা, বাঁশতৈল, বংশীনগর, বালিয়াজান, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর, খুইদারচালা, ঘাগড়াই কুড়াতলী ও খাটিয়ার হাট, কটামারা, সোনালিয়া, ইনতখাচালা, কাহারতা, আবুর মার্কেট, হামিদ মার্কেট, মোতারচালা, জাবেদ মার্কেট, বড়চালা,গাজেশ^রী, কদমা, টাকিয়া কদমা, মামুদপুর,মজিদপুর, খাটয়ারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার বনের ভিতরে ও এর আশপাশে ভুমি খোকোরা দিনে রাতে পাহাড়ের টিলার লাল মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে করে বনজ সম্পদ যেম ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় নেমে এসেছে।
এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ দিন ধরে গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা, বাঁশতৈল এবং তরফপুর এই পাঁচটি ইউনিয়নের পাহাড়ি লাল মাটির টিলা কেটে নেওয়ায় পরিবেশের মারাত্বক হুমকির মুখে পরেছে।

অসহায় পাহাড়ি এলাকার ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক বেশ কয়েকজন নেতা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে দিনে রাতে পাহাড়ের লাল মাটির টিলা কেটে সাভার করে চিচ্ছে। ভ্যেকু দিয়ে মাটি কাটা এবং ড্রাম ট্রাক রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তপক্ষে ২০ টি গ্রামীণ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পরেছে। ড্রাম ট্রাকএ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগি এলাকাবাসি।

ভুক্তভোগি অভিযোগ করেন, পাহাড়ের লাল মাটির পাশাপাশি কোদালিয়া ও সৈয়দপুর ও গোড়াই পালপাড়া এলাকায় ভ্যেকু দিয়ে চলছে মাটি চুরির মহোৎসব। ৩০-৪০ টি ভ্যেকু চলছে এখানে। এলাকার রাস্তাঘাট দিয়ে চলাচল দুষ্কর। প্রকাশ্যে ও রাতের আধারে চলছে এ মাটি কাটার মহোৎসব। ফলে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি এলাকার রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। একই ভাবে মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া ও বহুরিয়া ইউনিয়নের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে চক্রটি। মাটি ও বালি ১৫-২০ টনের ড্রাম ট্রাক রাস্তার উপর দিয়ে নেওয়ার ফলে রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ড্রাম ট্রাক চলায় ধূলোবালিতে আশপাশেল ঘরবাড়িতে বসবাস অনুপযোগি হয়ে উঠেছে। এক দিকে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে তেমনি সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। প্রভাবশালী মহল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফসলি জমির উপর দিয়ে জোর পুর্বক রাস্তা নির্মান করে দিনে রাতে ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি বহন করছে। কোন কৃষক বাঁধা দিলে তাদের নানা ভাবে মামলা ও পুলিশের গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটি চোরদের দাপটে ড্রাম ট্রাক চলায় দেওহাটা-বহুরিয়া রোড, দেওহাটা-যুগিরকোপা রোড, কাশে ড্রাইসেল-কোদালিয়া রোড, গোড়াই-সখীপুর রোড, হাটুভাঙ্গা-আজগানা-কুড়িপাড়া রোড, পেকুয়া-পাথরঘাটা রোড, বাঁশতৈল-বালিয়াজান রোড, মির্জাপুর-ভাওড়া রোড, মির্জাপুর-ওয়ার্শি-বালিয়া রোড, ভাতগ্রাম-লাউহাটি রোড, কুরনী-ফতেপুর-বাসাইল রোড, কদিমধর‌্যা-ছাওয়ালী-মহেড়া রোড, পাকুল্যা-দেলদুয়ার রোড, পাকুল্যা-লাউহাটি রোডসহ অন্তত ৩০-৩৫ টি গ্রামীণ রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে ১৫-২০ টি ছোট বড় ব্রিজ কালভাটএ ব্যাপারে বাঁশতৈল রেঞ্চ অফিসের রেঞ্জ অফিসার মো. শাহীনুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য। কেউ যাতে বনের লাল মাটি ও টিলা কেটে নিতে না পারে সে জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের সহকারী পরিচালক মো. জমির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোন অবস্থায় পাহাড়ের রাশ মাটি টিলা কাটা যাবে না এমন নির্দেশনা রয়েছে সরকারী ভাবে। যারা এর পিছনে জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে বন বিভাগ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম এবং সহকারী কমিশনার (ভুমি) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদুর রহমান বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় একটি চক্র পাহাড়ের লাল মাটির টিলা, নদী ও নদীর চর এবং ফসলির জমির মাটি ভ্যেকু ও ড্রেজার বসিয়ে কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খবর পেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদরে এ অভিযানর আরও কঠোর ভাবে পরিচালিত হবে বরে তারা জানিয়েছেন।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//