নিজস্ব প্রতিবেদক
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত ১৫ দিন ধরে সারের তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় এলাকার কৃষকরা চরম বিপাকে পরেছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ, সারের ডিলার এবং হাট বাজারে সার না পেয়ে কৃষকরা হন্যে হয়ে ছুটাছুটি করছেন। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে বরাদ্ধ কম থাকায় সারের অভাবে এ বছর মির্জাপুর উপজেলায় নয় হাজার ৫শ হেক্টর জমির সরিষার আবাদসহ আলু ও শীতকালিন ফসলের আবাদ না হওয়ার আশংকা করছেন ভুক্তভোগি কৃষকরা। আজ মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) হাট-বাজার, ডিলারের দোকান এবং কৃষি অফিস ঘুরে দেখা গেছে সার সংকটের চিত্র। উপজেলা কৃষি অফিস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, পরিবহন ধর্মঘটসহ গোডাউনে সার বিতরনে বিভিন্ন অংসগতির কারনে ডিলারগন সার উত্তোলন করতে পারছেন না। বেশী দামে সার বিক্রি করায় বেশ কয়েকজন সার ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের ডিএপি এবং এমওপি সারসহ বীজ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৯ হাজার ৫০০শ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে যা টাঙ্গাইল জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে সর্বাধিক। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। এ সময় ডিএপি এবং এমওপি সারের চাহিদা থাকে বেশী। ১৫-২০ দিনের জন্য সারের প্রয়োজন ১১শ মেট্রিক টন থেকে ১৪শ মেট্রিক টন। এ বছর মৌসুমের প্রথধম থেকেই হঠাৎ করে সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। টাঙ্গাইল, জামালপুর ও নারায়নগঞ্জ গোডাউন থেকে সরবরাহ করার কথা থাকলেও গত ১০-১২ দিন ধরে সরবরাহ কমে গেছে। তবে উপজেলার চার হাজার ২১০ জন কৃষককে ২০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি এবং আলু ও বীজ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষকদের মধ্যে বানাইল ইউনিয়নের ইরিয়াজ মিয়া (৬৭) ও ওয়ার্শি ইউনিয়নের সমেজ আলী (৬৬)সহ শথাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, এখন সরিষা বপনের ভরা মৌসুম। এই মৌসুমে ডিলার ও হাট বাজারে সারের দোকানে সার পাওয়া যাচ্ছে না। চড়া দাম দিয়ে সারের কোন সন্ধান না পাওয়ায় তারা চরম বিপাকে পরেছেন। সারের অভাবে সরিষা, আলুসহ শীতকালিন ফসলের আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টির দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন। অপর দিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাওড়া, ভাদগ্রাম, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নে কৃষকদের মধ্যে চলছে সারের জন্য চরম সংকট।
উপজেলা সার ডিলার মালিক সমিতির সমিতির সাধারন সম্পাদক ও ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন এবং ডিলার মো. আব্দুল করিম বলেন, গত বছর এই মৌসুমে সারের বরাদ্ধ ছিল ৫০ টন। চলতি মৌসুমে বরাদ্ধ মাত্র ১৮ টন। বরাদ্ধ কম এবং কৃষি বিভাগের গাফিলতির কারনে নির্ধারিত সময়ে সার মিলছে না। গোডাউন থেকে সার উত্তোলন সমস্যা এবং পরিবহন সংকটসহ সুষ্ঠু তদারকির অভাবে সার সরবরাহ করতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকার কৃষকদের দিকে বিবেচনা করে বিষয়টি তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, পরিবহন সংকটসহ বিভিন্ন কারনে সরিষা মৌসুমের সময় সারের সাময়িক সংকট চলছে। তবে বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মধ্যে সরকারী প্রনোদনার বিনামুল্যে ৪ হাজার ২১০ জন কৃষককে ২০ কেজি হারে ডিওপি এবং ১০ কেজি হারে এমওপি সারসহ বীজ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা যাতে হয়রানীর শিকার না হন এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভ’মি) মীর্জা মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, কৃষকরা যাতে নির্ধারিত মুল্যে সার ক্রয় করতে পারেন সে জন্য প্রশাসন থেকে বিভিন্ন এলাকায় মনিটিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ডিলারগন যাতে কারখানা থেকে সার উত্তোলন করে হাট বাজার ও কৃষকদের মেধ্য নায্য মুল্যে বিক্রি করতে পারেন সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post