শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট, প্রতিনিধি :
তিস্তা চরে মেহেদি রাঙানো আই লাভ ইউ লেখা পিঠমোড়া করে বাঁধা তরুণী নববধু জোসনা বানু (১৮) এর ঘাতক তার স্বামী জাহিদ ইসলাম (২০)। পুলিশ প্রাথমিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে স্বামীকে ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আটক করে। থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে নববধুকে হত্যার কথা স্বীকার করে। আজ বুধবার ঘাতক স্বামী জাহিদ ইসলাম কে আদালতে সোপর্দ করা হবে। সে হত্যার কথা স্বীকার করে জুডিশীয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিবেন চবলে জানা গেছে।
ডিমলা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চৌরাহা মাদ্রাসা সংলগ্ন তিস্তা নদীতে ভাসমান অবস্থায় ওই নবধুর মরদেহ উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ। হতভাগ্য নববধু জোসনা বানু ডিমলা উপজেলার টেপাখড়ি বাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামের কৃষক জহর আলীর মেয়ে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। নিহতের মাত্র ১৯ দিন আগে একই উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের মোহম্মদ আলীর ছেলে জাহিদ ইসলামের (২০) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ঘাতক সন্দেহে পুলিশের হাতে আটক জাহিদ ইসলাম ঢাকায় ট্যাম্পু চালক । গত শুক্রবার চাচাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি আসেন। ওই দিন বিকেলে সেখান থেকে নিখোঁজ হন জোসনা। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ডিমলা থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করে তার পরিবার।
গত রবিবার সকালে মহিষখোচা ইউনিয়নের চৌরাহা মাদ্রাসা সংলগ্ন তিস্তা নদীর চরে ভেসে আসে তরুণী মরদেহ। তরুণীর মেহেদি রাঙা হাতে লেখা ছিল ‘আই লাভ ইউ’ । দুই হাত ওড়না দিয়ে পিঠমোড়া করে বাঁধা ছিল। মুখমন্ডল ঝলসানো ছিল। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে পরিচয় নিশ্চিত হতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে হিম ঘরে লাশটি সংরক্ষণ করে। পরে তার পরিবার পরিজনরা এসে মরদেহ শনাক্ত করেছে। পোষ্টমডেম শেষে ডিমলা থানায় মামলা থাকায় মরদেহ সংশ্লিষ্ট থানা—পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নববধু জোসনার খোয়া যাওয়া মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে স্বামীর সঙ্গে নববধুর সবশেষ কথা বলার তথ্য মিলে। স্বামী ও নববধুর দু’জনের মোবাইল লোকেশন একখানে পাওয়া যায়। এই সূত্র ধরে স্বামী কে পুলিশ ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্দেহ জনক ভাবে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার নবপরিণিতা স্ত্রীকে হত্যা করে। হত্যার প্রাথমিক কারণ তার স্ত্রী তার সাথে ঢাকায় যাওয়ার বায়না ধরেছিল। ঘাতক স্বামী পুলিশের কাছে স্বীকার করে চাচাতো বোনার বিয়ের অনুষ্ঠান হতে মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীকে ঢেকে নেয়। তাঁকে স্ত্রী মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু ঘুরতে নিয়ে যায়। এই ঘুরতে নিয়ে যেতে কোন এক বন্ধুর মোটরসাইকে চেয়ে নিয়ে ব্যবহার করেছিল। মহিপুরের নির্জন জায়গায় বসে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে ওড়নাদিয়ে পিঠমোড়া করে জোসনাকে বেঁধে ফেলে। তারপর হাতবাঁধা অবস্থায় স্ত্রী সহ সেতুর ওপর উঠে। সেখান হতে তার স্ত্রী লাফিয়ে পড়ে নদীতে। এমন গল্প সাঁজায়। পুলিশ যখন জিজ্ঞাস করে তাহলে মুখমন্ড এসিড দিয়ে ঝলসানো ছিল কিভাবে। তখন বলে তাকে হত্যার পর মোটরসাইকেল ব্যাটারির এডিস দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়। পুলিশকে নানা অসংলগ্ন কথা বলে।
ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ রায় জানান, এ ঘটনায় তরুণীর চাচা অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ক্লুলেস মামলা ছিল। মাঠপযার্য়ে পুলিশ তদন্ত করে খুবদ্রুত বেড় করেছে। স্বামী জাহিদ ইসলামের সাথে মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে ছিল নবপরিণিতা স্ত্রী জোসনা। খুব দ্রুত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘাতক তার স্বামী প্রাথমিক ভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এখন ওই তরুণীকে হত্যা সময় অন্য কেউ ছিল কি না খতিয়ে দেয়া হচ্ছে। নিহতের স্বামী জাহিদকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আজ বুধবার নীলফামারী আদালতে পাঠানো হয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে ১৬৪ করতে। ঘটনাটি খুবেই নির্দয় ও নির্মম ছিল।
Discussion about this post