ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এবারো কোরবানিযোগ্য পশুর যত্ন নেওয়া ও বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন মেহেরপুর জেলার খামারিরা। এদিকে মুজিবনগরের রাজাবাবু জেলা ব্যাপি পরিচিতি পেয়েছেন। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে জেলায় ব্যাপক কুরবানীযোগ্য পশু প্রস্তুত আছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে মেহেরপুরের গবাদি পশু পাওয়া যাবে।
দেশের সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ বাড়ি গুলো যেন ছোট ছোট খামারে রুপ পেয়েছে। নিজ নিজ উদ্দ্যোগ আর সরকারী প্রাণী সম্পদ বিভাগের সহায়তায় গড়ে উঠেছে এসব খামার। নিজ সন্তানের মতই এসব গবাদি পশু গুলোকে লালন-পালন করছেন খামারীরা। আবার প্রয়োজনে নগদ অর্থের যোগান দিচ্ছে এসব গবাদি পশু। পরিবারের ছোটখাট প্রয়োজন থেকে মেটানো থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও জমি ক্রয়ের কাজে লাগাচ্ছে পশু বিক্রির টাকা। তবে গো খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে আরও ভালো হতে বলে দাবি করেছেন খামারীরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ তথ্যমতে এবছর জেলায় ২৯ হাজার ৫র্শ ৪০ জন খামারসহ বিভিন্ন পরিবারে এক লক্ষ ৯০ হাজার ৫র্শ ২০টি কোরবানি যোগ্য গবাদি পশু পালন হয়েছে । যার মধ্যে গরু ৪৯ হাজার ৫র্শ, ছাগল এক লক্ষ ৩১ হাজার। এ জেলার চাহিদ মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অ লেও যাচ্ছে এ জেলার গবাদি পশু। যত দিন যাচ্ছে ততো মেহেরপুর শহরের গো হাট ও জেলার গাংনী উপজেলার বামন্দী হাটে গরু কেনা-বেচা বাড়ছে। তবে জেলার মুজিবনগর উপজেলা মোনাখালী গ্রামের মুজিবনগরের রাজাবাবু নামের পরিচিতি গরুটি জেলা ছাড়িয়ে পরিচিতি পেয়েছে জেলার বাহিরে। প্রায় ৬০ মন ওজনের এই মুজিবনগরের রাজাবাবুকে এক নজর দেখতে জেলার বাইরে থেকে মানুষ আসে। স্বাভাবিক দেখলেও মনে হবে গরু নয় এটা যেন হাতি। মুজিবনগরের রাজাবাবুর দাম হাকিয়েছেন ৪০ লক্ষ টাকা। তবে স্থানীয়ভাবে বিক্রি না হলে ঢাকার পথে যাবে বলে জানান গরুর মালিক।
অন্যদিকে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি পরিচর্যা করার লক্ষ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা । খাবার দেওয়া, গোসল করানো এছাড়াও নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
রাইপুর গ্রামের সেন্টু জানান,চাকরী না হওয়াই আমি নিজ উদ্যগে আমার নিজ বাড়িতে একটি খামার তৈরি করেছি। সেখানে প্রতি বছর পাঁচ ছয়টা গরু পালন করি। এই থেকে জীবন জীবিকা আমার সংসারের আয়ব্যায় এখান থেকেই হয়। প্রতি বছরে ঈদে ঢাকার পাটির কাছে বা নিজেই ঢাকার হাটে নিয়ে এই গরু গুলো বিক্রয় করি । সে থেকে আমার ভালো লাভ হয়। আমাকে আর চাকরীর পিছনে ছুটতে হয়নি। এ জেলার কর্ম হীন যুবকদের কে এটাই বলবো যে তারা যেন আমার মত বাড়িতে খামার তৈরি করে।
ষোরটাকা ইউনিয়নের নারী খামারী জানান, নিজ সন্তানের মতো কমে লালন পালন করি। সকাকে উঠে গরুর গোসল করা থেকে শুরু করে গোয়াল পরিস্কার করা পযন্ত প্রতিদিনের কাজ । আবার কারেন্ট না থাকলে পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। তার খাদ্য তালিকায় থাকে গোম,ধান,খেসারি,ভুটা,ছুলা সহ কাচা ঘাস ।
মুজিবনগরের ইনসান আলী জানান, চার বছর আগে ব্যাপারির কাছ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। গরুটা দিনদিন দেখতে ভালো হয়ে গেল প্রতিদিন অনেক জায়গায় থেকে তাকে দেখতে আসতো তার পর থেকেই আমি তার নাম রাখলাম মুজিবনগরের রাজাবাবু এই নামে তার বেশ ভালো পরিছিত হয়। সেই থেকেই আমরা তাকে রাজাবাবু নামে দাকাদাকি করি । তার খাওয়া দাওয়া ছোলা ,ভুট্র,গম ইত্যাদি এই গুলো মাড়ায় করে খাবার তৈরি করে তাকে খাওয়াই। আমি তার দাম দিয়েছি ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা বাড়ি থেকে বিক্রয় হলে ভালো না হলে ঢাকায় বাজারে তুলতে হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান,এখানকার মাঠি, মানুষ ও আবহাওয়া সকল কিছু প্রাণী পালনের অনুকুল এলাকা। জেলায় ২৯ হাজার ৫র্শ ৪০ জন খামারসহ বিভিন্ন পরিবারে এক লক্ষ ৯০ হাজার ৫র্শ ২০টি কোরবানি যোগ্য গবাদি পশু পালন হয়েছে । যার মধ্যে গরু ৪৯ হাজার ৫র্শ, ছাগল এক লক্ষ ৩১ হাজার। মোটাতাজা করণ করে আসছে অনেক খামারী। সামনে ঈদুল আজহাতে আশা করি ন্যায্য মূল্যে পাবে এবং খামারীরা উপকৃত হবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২১ জুন ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post