পশু জবাইয়ের পর মাংস প্রক্রিয়াকরণের কয়েকটি খুবই প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর মধ্যে অন্যতম অনুসঙ্গের নাম হচ্ছে কাঠের পাটাতন ‘খাইট্টা’। সারা বছর কসাইখানায় এটির ব্যবহার হলেও বিপুল চাহিদা এসে ধরা দেয় ঈদুল আজহার সময়। কোরবানির মৌসুমে গ্রাম থেকে শহরের বাড়ি পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ঘটে। একটি গরু প্রক্রিয়া করতে প্রায় দুই থেকে তিনটি গুঁড়ির প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাইতো কোরবানী দাতারা আগে ভাগেই কিনছেন এ অনুসঙ্গটি।
সাধারণত এলাকার স’ মিলগুলোতে গাছের গুঁড়ি করাতে ফেলে ছোট ছোট গোলাকৃতির টুকরো তৈরি করে এটি বানানো হয়। এলাকাভেদে এর বিভিন্ন নাম আছে। কোথাও এটাকে বলে খাইট্টা, কোথাও আবার বলে খটিয়া, কাইটে, গুঁড়ি, শপার, হাইজ্যা ইত্যাদি। তবে নাম যাই হোক এটি তৈরী করছেন বিভিন্ন স মিল মালিকরা। প্রতিটি সাধারণ মানের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। এরসঙ্গে আরও আছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার প্রসেসিং চার্জ। তবে, গুঁড়ির ওজনের ওপর এই দাম নির্ভর করে। বড় আকারের গুঁড়ির দাম প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ছাতিয়ানের আদম আলী জানান, তার স’ মিলে সারাবছরই এই গুঁড়ি বিক্রি হয়। পেশাদার কসাইরা তার কাছ থেকে গুঁড়ি নিয়ে থাকেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে তার স’ মিলে তিনি প্রায় পাঁচশ’র বেশি ‘খাইট্টা’ তৈরি করেন। প্রায় পুরো শহরের চাহিদা তিনিই মেটান।
গাংনীর স’ মিল মালিক জুলহাক জানান, শহরের বড় বাজারে তার স’ মিলের গুঁড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি প্রায় ৩০০টি গুঁড়ি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০০টি বিক্রি করে ফেলেছেন। আরো কয়েকজন কোরবানী দাতা ও কসাই খাইট্টার অর্ডার দিয়েছে।
বামন্দীর বাবু কাজী জানান, এবার গুঁড়ির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। গতবার যে গুঁড়ি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় কেনা হয়েছিল, এবার সেটা ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা হয়েছে। তিনি দুটি কাঠের গুঁড়ি কিনেছেন।
কুঞ্জনগরের আকাশ জানান, তিনভাগে কোরবানী করছেন। নিজেরাই মাংস কাটবেন তাই দুটি খাইট্টা কিনেছেন। তবে গেল বারের চেয়ে দাম একটু বেশি।
মৌসুমি কসাই কুঞ্জনগরের আজিজুল, জালালসহ কয়েকজন জানান, তারা প্রতিবছরই ঢাকাতে কোরবানীর মাংস কাটার কাজে যান। এবারও যাবেন। তাই চারটি খাইট্টা কিনেছেন।
জোড়পুকুরিয়া এলাকার হাবিব জানান, চার জনের একটি দল করেছেন অন্যের কোরবানির জবাই করা পশু কেটে মাংস প্রক্রিয়া করতে। তিনিও এসেছেন কাঠের গুঁড়ি কিনতে ভাই ভাই স’ মিলে। এ কাজে তারা তাদের নিজস্ব কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার করেন। গরুর মালিকরা অনেক সময় গুঁড়ি সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু, তাতে ভাল কাজ হয় না। তিনি ১৫০০ টাকা দিয়ে একটি গুঁড়ি কিনলেন। তিনি জানান, একটি গরু কেটে মাংস প্রক্রিয়া করে তিনি ৪৫০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত নেন। ইতোমধ্যে দুটি গরুর কাজ পেয়েছেন তিনি।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২১ জুন ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post