মেহেরপুরের লাভের আশায় আগাম বাধাকপি চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছে চাষিরা। ভেজাল বীজ কিনে প্রতারিক হয়েছেন জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষি। উপড়ে ফেলা হচ্ছে শতাধিক বিঘা জমির বাধাকপি। চাষিদের অভিযোগ জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজে শুধু গাছ বড় হচ্ছে, অথচ সময় পেরিয়ে গেলেও বাধাকপির দেখা নেই। অন্য বীজের কপি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ টাকা বিঘা দাম করে কিনে নিচ্ছে ফড়িয়ারা। কিন্তু রাজাসান বীজে কোন ফলনই নেই। এতে কেও কেও মাঝ সময়ে এসেও গাছ উপড়ে ফেলে অন্য চাষাবাদ শুরু করে । সব মিলিয়ে এ জেলার কৃষকদের ক্ষতির পরিমান দাড়িছে প্রায় কোটি টাকা। এমন ঘটনার পর থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না বীজ সরবরাহকারী এবং বীজ ও সার ব্যবসায়ি আনারুলকে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর, বামন পাড়া ও চকশ্যামনগর গ্রাম পাশাপাশি। তিন গ্রামের প্রায় ৮০ জন কৃষক আনারুল নামের এক বীজ ও সার ব্যবসায়ির কাছ থেকে আগাম জাতের বাধাকপির বীজ ক্রয় করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিঘার পর বিঘা জমিতে লাগানো আছে বাধা কপি। তবে কোন গাছেই কপি বাধেনি। সবগুলো লম্বা লম্বা পাতা হয়ে আছে। কোন কোন গাছে পাতা কুকড়িয়ে পচন ধরেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আনিছদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে কপি চাষ করে আসছি। এ বছরে আনারুল রাজাসান কপি ভালো বলে প্রচার প্রচারণা চালালে আমিসহ অনেকেই আনারুলের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করি। ১ মাস ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কপির পাতা বাধেনি।
এবিষয়ে আনারুলকে অবগত করলেও কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। মাঠে অন্য জাতের কপি বেচাকেনা চলছে। কিন্তু আমাদের কপি এখনও পাতাই বাধেনি। আমরা বড় ক্ষতির মধ্যে পড়েছি। তারা আমাদের কিছুক্ষতি পূরণ দিলে আমরা এত বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতাম।
আরেক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক নাজের আলী বলেন, আমি গত চার বছর যাবৎ রাজাসান কপি চাষ করছি। গত বছরে ভালো ফলন পেয়েছি। দোকানদার বলেছিল দাম একটু বেশি লাগবে বীজ ১ নাম্বর হবে। তার কথা মতো বীজ নিয়ে চারা দিই কিন্তু আজ ৩৭ দিন পার হলেও কপির পাতা বাধার কোন আকার দেখতে পাচ্ছিনা। তিন বিঘা জমিতে লাগানো হয়েছে। এইকপি চাষে আমি ৬০ হাজারের উপরে খরচ করেছি। আমি ধারদেনা করে কপিতে খরচ করেছি। এই কপি যদি না হয় আমি কি করে সংসারে চালাবো একথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এ বিষয়ে আমরা নামের তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এবিষয়ে আনারুল ইসলামবলেন, আমার মূলত সার ও বিষের ব্যবসা আছে । আমি মেহেরপুর বড় বাজারের সুমনা বীজ ভান্ডার থেকে বীজ এনে চাষীদের দিয়ে থাকি। কপির পাতা বাধেনি বিষয়টি আমি শুনেছি। সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে কিন্তু তার কোন সাড়া মিলছে না। বিভিন্ন ভাবে সে সময় ক্ষেপন করছে। যেহেতু চাষীদের ক্ষতি হয়েছে তাদের সপ্তাহ খানেক পর একটা ব্যবস্থা করা হবে।
সুমনা বীজভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সুমন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন বীজ বিক্রিই করিনি। যে চাষী আমার কথা বলেছে আমি তাকে চিনিনা এমনটাই বলছেন বীজ ও সার ব্যবসায়ী সুমন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চাষিদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। চাষিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে বীজ ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post