গাংনী, মেহেরপুর: তীব্র তাপদাহে তৃষ্ণা মেটাতে পানি, শরবত কিংবা অন্যান্য কোমল পানীয় পানের বিকল্প নেই। তাইতো সকলেই বারবার এসব পানীয় পান করছেন। গরম এলেই এসব পানীয়র পাশাপাশি বেড়ে যায় ডাবের চাহিদা। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। বাজারে প্রচুর ডাব থাকলেও নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্রেতা। ডাবের মূল্য অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় ক্রেতা সাধারণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে ডাব ব্যবসায়ীদের ধারণা। তবে ক্রেতারা বলছেন ডাব এখন বিলাসী পণ্য ছাড়া আর কিছুই না।
একমাত্র রোগী ও রোগীর স্বজনরা ছাড়া আর কেউই ডাব কিনছেন না। বিগত বছরগুলোর বাজারদর ছাড়িয়ে ডাব এখন বিলাসী পণ্য হয়ে গেছে। ৫০/৬০ টাকার ডাব এখন ১৪০/১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
মঙ্গলবার (১৪ মে), সকাল থেকে বিকেল অবধি মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে ডাব বিক্রেতার অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। ক্রেতা সাধারণেরও তেমন একটা ভীড় পরিলক্ষিত হয়নি।
দু’একজন ক্রেতার দেখা মিললেও দাম-দরে বনিবনা না হওয়ায় ডাব না কিনেই বাসায় ফিরতে দেখা যায়।
মেহেরপুর শহরের কোর্ট রোড, জেনারেল হাসপাতাল গেট, বামনপাড়া, গাংনী বাসস্ট্যান্ড বাজার, হাসপাতাল বাজার, বামুন্দী, আমঝুপি, ভাটপাড়া ও কেদারগন্জসহ বিভিন্ন বাজারে বড় সাইজের ডাবের দাম হাঁকতে শোনা গেছে ১’শ ৪০ থেকে ১’শ ৬০ টাকা। মাঝারি সাইজের ডাবের দাম হাঁকতে শোনা যায় ১’শ ২০-১’শ ৩০ টাকা এবং ছোট সাইজের দাম শোনা গেছে ১’শ টাকাতে।
বিক্রেতারা বলছেন, মেহেরপুরের বাইরে থেকে কিনে তা পিক-আপযোগে আনতে অনেক ভাড়া। তাছাড়া গরমে ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারেও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে স্থানীয় বাজারেও ডাব বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বামনপাড়ার আশাদুল ইসলাম জানান, বাইরে থেকে আনতে খরচ বেশি। তাছাড়া গরম না থাকলেও আমাদের ডাব সংগ্রহে রাখতে হয়। শীতকালে ক্রেতা সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকায় অনেক সময় ডাব নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই পাইকাররা হয়তো গরমে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করছেন। যার প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়ছে। তবে তিনি ৭০-৮০ টাকায় কিনে ১’শ টাকায় ডাব বিক্রি করছেন বলে জানান।
গাংনী বাজারের একজন ডাব ব্যাবসায়ী বলেন, রাজবাড়ীর কালুখালী থেকে ডাব কিনে গাড়ি ভাড়া দিয়ে এমনিতেই ১’শ টাকা পড়ে যায়। তাছাড়া সারাদিনে কতটিই বা ডাব বিক্রি হয়েছে। একজন ক্ষেতে নিড়ানি দিতে গেলেও সকাল থেকে বেলা ১২ টা অবধি ৪’শ টাকা আয় করে থাকে। যেখানে সকাল থেকে সন্ধা অবধি রোদে পুড়ে ডাব বিক্রি করেও আমাদের ৫’শ টাকা আয় হয়না।
জোড়পুকুরিয়া বাজারে একজন ভ্রাম্যমান ডাব ব্যবসায়ী জানান, সকাল থেকে এখন অবধি বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে প্রায় ৩৫-৪০ টির মতো ডাব বিক্রি হুয়েছে। এখনও ৬০ টির মতো ডাব বিক্রি বাকি রয়েছে। চাহিদা থাকলে কোন সকালে সকল ডাব বিক্রি হয়ে যেতো। এদিকে গত ২ দিন ধরে আবারও শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ কিন্তু শুরু হয়নি ডাব বিক্রি। গরমে কষ্ট পাচ্ছে তবুও ডাবের দাম জিজ্ঞেস করে না কিনে ফিরে যাচ্ছে। হয়তো দাম বেশি একারণেই না কিনে ফিরছেন ক্রেতারা।
গাংনী হাসপাতাল বাজারে ডাব ক্রেতা সালেহার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডাব বড়লোকের বিলাসী পণ্য হয়ে গেছে। ডাবের যে দাম তাতে করে বড়লোক ছাড়া গরীবের কেনার সাধ্য কোথায়। গ্রামে ৫০-৬০ টাকায় ডাব মিললেও শহরে এসে প্রয়োজনে ১’শ টাকায়ও তা মিলছেনা। অথচ গ্রাম থেকেই এসব ব্যবসায়ীরা ৩০-৪০ টাকায় ডাব কিনে এতো দামে বিক্রি করছে। এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১৫ মে ২০২৪

Discussion about this post