নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক হওয়ায় পুলিশ-র্যাব ও ডিবিসহ নড়চেড়ে বসেছে। গত কয়েকদিন ধরে মাঠে রয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। এবার সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত দুই ‘বড়ভাইকে’ তারা গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত দুইজন হলেন, যশোর ব্যাপক আলোচিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ও দেড় ডজন মামলার শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহবুব রহমান ম্যানসেল। পৃথক অভিযানে তাদের ছয় সহযোগীও গ্রেফতার হয়েছে। বুধবার দুপুরে ও রাতে পৃথক অভিযানে তারা গ্রেফতার হন।
সূত্র জানায়, যশোরে পৌর কাউন্সিলার জাহিদ হাসান মিলন ওরফে টাক মিলনসহ চারজনকে মদ্যপ অবস্থায় পুলিশ আটক করেছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে শহরের পালবাড়ি কাঁচা বাজার এলাকার টাক মিলনের নিজ কার্যালয়ে থেকে তাদের আটক করা হয়।
টাক মিলনের সাথে আটক তিনজন হলেন, শহরের টালিখোলা এলাকার আকবার আলী ছেলে দস্তগীর, কদমতলা এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও টালিখোলা এলাকার আব্দুল গফফারে ছেলে মারুফুজ্জামান।
এদিকে, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জাহিদ হাসান মিলন ওরফে টাক মিলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে দুবাই চলে যান তিনি। নাগালের বাইরে থাকায় তখন গ্রেফতার করতে পারেনি যশোরের পুলিশ। অবশেষে দুবাই থেকে দেশে ফেরার পথে টাক মিলনকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেফতার করে। সে সময় তার গ্রেফতারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে নির্যাতিত ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার যুবলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম সোহাগকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ রয়েছে, ওই হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী টাক মিলন। ওই মামলায় আটক এক আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে টাক মিলনের নাম উঠে আসে। এই মামলার সন্ধিগ্ধ আসামি তিনি। এছাড়াও একাধিক মামলা, অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
টাক মিলন যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ইজিবাইক, ট্রাকে ব্যাপক চাঁদাবাজি, এলাকার মানুষের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও পালবাড়ির রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো (জুয়া) ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারির সামনে মানিক ওরফে ডিম মানিককে হত্যা করা হয় টাক মিলনের নির্দেশে।
রুহুল নামে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যার পর শহরের কাজীপাড়া তেঁতুলতলা নদীর পাড়ে পুতে রাখা হয়। কাজীপাড়া এলাকার শিমুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করে টাক মিলনের ক্যাডার বাহিনী। বছর খানেক পর শিমুল মারা যান। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যার মূলপরিকল্পনাকারীর মধ্যে মিলনের নাম রয়েছে।
শুধু খুন নয়, চাঁদাবাজি, জুয়া, টেন্ডারবাজি, বোমাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে টাক মিলন ও তার ক্যাডার বাহিনীর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শহরের পালবাড়ি মোড়ের রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে টাক মিলনের নেতৃত্বে ওয়ান-টেন জুয়ার আসর পরিচালিত হয়েছে। যশোরের ইয়াবার ডিলার হিসেবে পরিচিত টাক মিলন।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দফতরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন মিলন। তার ইশারা ছাড়া কেউ টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। শহরের ইজিবাইক চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের মূলহোতা এই টাক মিলন। রেজিস্ট্রি অফিসসহ সব সরকারি অফিসে টাক মিলনের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সবাই।
যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (অপারেশন্স) বিশ্বাস জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাঁচা বাজার সংলগ্ন জনৈক ওয়াহিদের ভাড়া দেওয়া ভবনে অবস্থিত ইন্টারনেট ব্যবসার অফিসে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখানে কয়েকজন বসে মদ সেবন করছিলেন। পুলিশ সেখান থেকে পৌর কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলনসহ ৪ জনকে আটক করে। এছাড়া ওই অফিসের ভেতর থেকে কয়েক বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
অপর দিকে; বুধবার দুপুরে যশোরের বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলসহ চার ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যশোর সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে আবারো হানা দেওয়ার ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। ইতিপূর্বে ‘কথিত ক্রসফায়ারে’ তিনি এক পা হারালেও থেমে থাকেনি তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড
এর আগে গত বছর (২০২৩ সাল) ৫ মার্চ সরকারি ওই কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত ও কর্মচারীকে মারপিট করেছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলসহ তার ক্যাডাররা। ওই ঘটনায় জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ থানায় মামলা করলে ম্যানসেলকে কয়েক মাস হাজতবাস করতে হয়। ‘জোর করে’ সেই মামলা প্রত্যাহারের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করাতে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ওই অফিসে ফের হানা দেন ম্যানসেল।
যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহবুব রহমান ম্যানসেল যশোর পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। গত বছর ওই হামলার পর দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ৫ মার্চ সন্ত্রাসী ম্যানসেল যশোর শহরের মুজিব সড়কের সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিতে যান। তাকে সেবা দিতে দেরি হয়েছে এই অযুহাতে ম্যানসেল ও তার ক্যাডাররা ওই অফিসের কর্মচারী আল আমিনকে মারপিট এবং জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণকে লাঞ্ছিত করেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//ফেব্রুয়ারী ১৫,২০২৪//

Discussion about this post