শেখ সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট থেকে: রংপুর অঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যার পদধ্বনি শুনা যাচ্ছে। রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় তিস্তা,ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি আশস্কাজন বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধান প্রধান নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ৫ জেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। এসব জেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট দেকা দিয়েছে।
তিস্তা নদীর পানি দ্বিতীয় দিনের মত বিপদ সীমার ১০ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দোয়ানির তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে ২০ সেঃমিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি শিমুল বাড়ি পয়েন্টে ২৪ সেঃমিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে তিস্তা ও ধরলা নদী অববাহিকায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। সবচাইতে ক্ষতি হয়েছে চরের প্রদান ফসল বাদাম ও পাট। কোথাও কোথাও নমল ভুট্টা ও ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি বন্দি রয়েছে তিস্তা ও ধরঅ চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। সাধারণ মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মত বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টায় তিস্তা নদী কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের দোয়ানি পয়েন্টে বিপদ সীমার ২০ সেঃমিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ২৪ সেঃমিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুরে কাউনিয়া, হারাগাছ, মহিপুর , লালমনিরহাটের রাজপুর, খুনিয়াগাছ, তাজপুর, মহিষখোচা, হলদিবাড়ি, পাটিকাপাড়া, সিন্দুণার্, পূর্ববিচনদই, পারুলিয়া, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, রাজারহাট, নাজিমখাঁ, উলিপুর, যাত্রাবাড়ি, গাইবান্ধার সাঘাটা, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও নীলফামারী জেলার জলডাকা, ডিমলা, পূর্ববিছনদই, ঝাড়সিংহেরশ্বর, পূর্বছাতনাই এলাকায় তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবেশ করেছে।
বন্যা সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের নদ—নদীসমূহের পানি সমতল সম্পর্কিত পূর্বাভাস (২০ জুন, ২০২৪ খ্রি.) আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ হতে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত স্টেশন কাউনিয়া (তিস্তা) +১৬ সে.মি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত (মি.মি.) পাটেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) ১৫৮.০, ঠাকুরগাঁও ৮৯.০, দিনাজপুর ৬১, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) ৫১.০, ডালিয়া (নীলফামারী) ১১২.০, পঞ্চগড় ৫৫.০। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত (মি.মি.)কোচবিহার (পশ্চিম বঙ্গ) ১৩৬.০, গোয়ালপাড়া (আসাম) ৮৭.০, জলপাইগুড়ি (পশ্চিম বঙ্গ) ৬৭.০, ধুব্রি (আসাম) ৬৩.০, গোহাটি (আসাম) ৬০.০। তিস্তা নদীর দোয়ানি পয়েন্ট রেড এলার্টজারি করা হয়েছে। রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, রত্নাই ও সতী নদীসহ সকল নদ নদী। তিস্তা ও ধরলা অববাহিকায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে কমপক্ষে একশতটি চর ও দ্বীপচরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। নদী পাড়ের চরাঞ্চলের প্রধান ফসল বাদাম, ভুট্টা ও নমলা ধান খেত তলিয়ে গেছে। কৃষক পরিবার গুলো তলিয়ে যাওয়া বাদাম ক্ষেত হতে বাদামের গাছ তুলে গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে খাওয়াচ্ছে। উঁচু জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় গো খাদ্যের তীব্র সংকট তৈরী হয়েছে। সেই চাহিদা মিটাচ্ছে তলিয়ে যাওয়া ফসলের গাছ। এদিকে ভারতের উত্তর সিকিমে ভারী বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর দেশের অভ্যন্তরে কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে উত্তরের নদ—নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। হু হু করে বাড়তে থাকা পানির চাপ সামলাতে ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে সবকটি জলকপাট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ—নদী তীরবর্তী কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর জেলার সমতল এলাকার দুইপাড়ের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হওয়ায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বন্যার সর্তকীকরণজারী করেছে। কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী (দুধকুমার) পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধার সাঘাটার কৃষক রমজান আলী(৫৫) জানান, তিস্তা নদীর অববাহিকায় চরে ১০ বিঘা জমিতে বাদাম জাতীয় ফসল করে ছিল। দুই সপ্তাহপরে বাদাম তোলা যেত। এরইমধ্যে উজানের ঢলে ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সে এখন ফসল হারিয়ে নিঃস্ব। লালমনিরহাটের মহিষখোচার বারোঘরিয়া পশ্চিমপাড়ায় তিস্তানদী তীব্রভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। এই নদী ভাঙ্গণের কারণে প্রায় ৩০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। তিস্তা নদীর গর্ভে তাদের বাড়িঘর বিলীণ হয়ে গেছে। একটি প্রভাবশালীমহল শীতের মৌসুমে মহিষখোচা স্পার বাঁধের কাছ হতে বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় এই ভাঙ্গণ বলে অভিযোগ করেছে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, গজলডোবায় পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা নদী তীরবর্তী দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শুস্কমৌসুমে তিস্তা নদীর কোথাও কোথাও হতে অবৈধ বালু উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালীমহল। পানি উন্নয়নবোর্ড এ বিষয়ে সরকারের আইনশৃংখলাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়ে আসছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post