মৃদুল হাসান:
উত্তরবঙ্গের বাতিঘর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর (বেরোবি) নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠাকালীন “রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়” পুনর্বহাল দাবিতে গনস্বাক্ষরসহ উপদেষ্ঠা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
২০০৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ রংপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে নীতিগতভাবে সম্মত হন। ফখরুদ্দিন আহমদ ২০০৮ সালের ২ফেব্রুয়ারি রংপুরে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশটি ১৫জুন ২০০৮তারিখে মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এম. লুৎফর রহমান ২০ অক্টোবর ২০০৮ এ প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন। দুই দিন পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালীন শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন।এরপর ২০০৮ সালে ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ প্রকাশ করে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।২০০৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে রংপুরের ধাপ এলাকায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালে জানুয়ারীতে রংপুর ক্যাডেট কলেজ ও কারমাইকেল কলেজ নিকটবর্তী অধিগ্রহণকৃত পরবর্তী একাডেমিক কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়। এটি ৭৫ একর এলাকাজুড়ে চারটি একাডেমিক ভবন নির্মান করেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ টি বিভাগ এবং প্রায় ৭০৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।এর অধীনে একটি লাইব্রেরী, একটি ক্যাফেটেরিয়া এবং তিনটি হল রয়েছে।
১৮ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের স্বাক্ষর ছিলো এবং শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া হল করার প্রস্তাব করেন। স্মারকলিপিতে বলা হয় দীর্ঘ আন্দোলনের রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর নামে পরিচালিত হচ্ছে বর্তমানে। রাজনৈতিক চতুরতার সাথে ফ্যাসিস্ট সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে। যাতে শিক্ষক শিক্ষার্থী আন্দোলন করলে নারী বিদ্বেষীসহ নানা ট্যাগ লাগিয়ে সহজে কন্ঠরোধ করা যায়। নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে আমরা শ্রদ্ধা করি, তিনি সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় ও বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব। এতএব পরিকল্পিতভাবে বদলে ফেলা প্রতিষ্ঠাকালীন পুনর্বহালের কামনা করছি ইত্যাদি উল্লেখ করেন।এছাড়াও বলা হয়েছে, যার নির্দেশে সরকারী আইনশৃঙ্গা বাহিনীর সদস্য আমাদের আবু সাঈদের বুকের তাজাপ্রান কেড়ে নিয়েছে তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল হতে পারেনা কারন এই ফ্যামিষ্টের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কারন। শিক্ষার্থী সজিব মিয়া বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামের কারনে কেউ চেনেও না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধু নারীদের জন্য, এমটিও অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকে।উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী জানান, ‘তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রথম নামটি পুর্নবহাল চাচ্ছে। এটির কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে।’বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম ও কাগজপত্র পরির্বতন অনেক দুঃসাধ্য কাজ এবং ব্যয়বহুল। প্রসাশনিক সকল নথি ও ওয়েবসাইট পরিবর্তনসহ বিপাকে পড়তে পারে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হলে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
নতুন নামের অধীনে আইনি দলিল, রেজিস্ট্রেশন, এবং অন্যান্য সরকারি কাজের জন্য নতুনভাবে কাজ করতে হবে। এতে সময় এবং অর্থের অপচয় হতে পারে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি এবং সার্টিফিকেটের মধ্যে পুরনো নাম থাকবে, যা ভবিষ্যতে তাদের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্যও নাম পরিবর্তন হতে পারে, সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ফলে পরিচিতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ডিজিটাল রেকর্ড এবং তথ্য সংশোধন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, ই-মেইল, ডাটাবেস, প্রকাশনা, এবং অন্যান্য ডিজিটাল রেকর্ডে নতুন নাম প্রতিস্থাপন করতে হবে, যা একটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হতে পারে।এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন সাধারণত প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত, যা অনেক সময় সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করলে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ভোগান্তি , একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল জটিলতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
Discussion about this post