আপ্যায়নের পর ডিসি ফুড জানান, রশীদের চারটি মিলে বাড়তি কোন ধান-চালের মজুত পাওয়া যায়নি। গোডাউন গুলোতে সব মিলিয়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ধানের মজুত আছে। এ সময় সেখানে ৬০ মেট্রিক টন চাল ট্রাকে লোড হতে দেখা যায়। বলতে গেলে রশীদের গোডাউনে চালের কোন মজুত ছিলই না।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে। সেই মোকামে চাউলের দাম বাড়ানো নিয়ে প্রতিনিয়তই ঘটে নানা ধরণের চালবাজি। সম্প্রতি সেখানে নতুন করে চালবাজি শুরু হওয়ায় মিডিয়ার শিরোনামে আলোচিত হয়ে উঠে সেই চাউল মোকাম।
চালবাজদের কৌশল প্রতিরোধের লক্ষে গতকাল বিকেল পাঁচটায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে হঠাৎ করেই পাঁচ সদস্যের একটি দল রশীদ এগ্রোতে পৌঁছায়। লোকে ভেবেছিল তারা বুঝি চাউলের দাম বাড়ানোর কারসাজি ঠেকাতে অভিযানে গেছেন।
কিন্তু না সেরকম কোন বিষয় নয়। কুষ্টিয়ার ডিসি ফুড সেখানে সংশ্লিষ্টদের খবর দিয়েই পরিদর্শনে গেছেন। কারন চালবাজরা পরিদর্শন টিমের অপেক্ষায় সেখানে প্রহর গুনছিলেন।
আব্দুর রশীদ দেশের দশ জন শীর্ষ চাল ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং রাইচ মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি। সারা দেশের হাতে গোনা যে কজন ব্যবসায়ী চালের বাজার দর ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন আব্দুর রশীদ তাদেরই একজন। আব্দুর রশীদের এক সাথে চারটি চালের মিল। সবগুলোই অটো রাইচ মিল।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের পরিদর্শন টিমে ছিলেন জেলা বাজার কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরী) মো: আব্দুল খালেক ও খাদ্য পরিদর্শক মো: জহুরুল ইসলাম।
আব্দুর রশীদ পরিদর্শন টিমকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁর অফিস কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় ফল-মূল, বিস্কুট, মিষ্টি দ্বারা তাদেরকে আপ্যায়ন করা হয়। পরিদর্শন টিম আপ্যায়িত হওয়ার পর আব্দুর রশীদের চারটি মিল পরিদর্শন করেন। অপ্যায়নের পর গোডাউনগুলোতে কি পরিমাণ ধান-চালের মজুত রয়েছে তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
এরপর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, রশীদের চারটি মিলে বাড়তি কোন ধান-চালের মজুত পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনের সময় তাঁরা রশীদের গোডাউনগুলোতে সব মিলিয়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ধানের মজুত দেখতে পান। এ সময় সেখানে ৬০ মেট্রিক টন চাল ট্রাকে লোড হতে দেখা যায়। বলতে গেলে রশীদের গোডাউনে চালের কোন মজুত ছিল না বলে জানান এই খাদ্য কর্মকর্তা।
খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে জানতে চাওয়া হয় একজন মিলার কত মেট্রিক টন ধান-চাল মজুত রাখতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, একটি মিলে এক মাস পর্যন্ত ১৮৯৬ মেট্রিক টন ধান মজুত রাখা যাবে। চালের ক্ষেত্রে ১৫ দিন মেয়াদ পর্যন্ত ১২৪৮ মেট্রিক টন পর্যন্ত মজুত রাখার নিয়ম রয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরো জানান, গত ২১ মে থেকে পরিদর্শনের সময় পর্যন্ত দশ দিনের ষ্টক খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাতে সেখানে বাড়তি কোন মজুত পাওয়া যায়নি। চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কি বলে মনে হচ্ছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে ধানের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও হঠাৎ করে রাজধানী ঢাকায় চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একটি মিল থেকে ৮-১০ ট্রাক চাল রাজধানী ঢাকায় যেত। এখন প্রতিদিন এক একটি মিল থেকে ১৮-২০ ট্রাক করে চাল যাচ্ছে ঢাকায়। একদিকে চাহিদা বেশি অন্যদিকে ধানের বাজার চড়া। এসব কারণে চালের দাম বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। প্রায় আড়াই ঘন্টারও বেশি সময় পরিদর্শন টিম রশীদের মিলে অবস্থান শেষে রাত সাড়ে ৭ টার দিকে সেখান থেকে বের হয়ে দেশ এগ্রোতে যান। তবে সে সময় তাদের অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ষ্টক দেখে সেখানে কয়েক মিনিট অবস্থান করে আবার শহরে ফিরে আসেন।
রশীদ এগ্রাতে গিয়ে আপ্যায়িত হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, উনারা ফল-মূল দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। তবে আমরা তা খাইনি। বিনয়ের সাথে উঠে এসেছি। তিনি আরো জানান, চালসহ বাজার দর নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাজার মনিটরিং কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ৩১,২০২২//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post