এজাহারভুক্ত এক আসামী গ্রেপ্তার
ফজলুল হক, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শনিবার সকালে ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিনের হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। এসময় পরিবারের আহাজারীতে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে মানববন্ধনস্থল। ওই কলেজের র্যাগ-ডে অনুষ্ঠানের শুধু অনাকাঙ্খিত ঘটনাই নয়, তাকে হত্যাকান্ডে রহশ্যের বিভিন্ন ইঙ্গিত করেন বক্তারা। পরে রোববার কলেজের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কালিয়াকৈরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আল আমিন হোসাইনকে(১৯) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে সংগঠনের একপক্ষের নেতাকর্মীরা। তিনি কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্র ও দ্বাদশ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি উপজেলার বরিয়াবহ এলাকার মোতালেব হোসেনের ছেলে। এ নৃশংস হত্যাকান্ডের দুইদিন পেরিয়ে গেলেও মুল আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে শনিবার সকালে উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় মানববন্ধনের আয়োজন করেন ওই কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
এসময় নিহতের বাবা, দাদী, নানা, ফুফুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আহাজারীতে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে মানববন্ধনস্থল।
নিহতের বাবা মোতালেব হোসেন আহাজারী করে বলেন, এ কেমন নোংরা রাজনীতি? মায়ের বুক খালি হলো। ছেলেকে হারিয়ে আমার যে কি যন্ত্রণা? আমি জানি। আমার ছেলেকে পরিকল্পিত কত্যাকান্ড। এখানে স্বাক্ষীর দরকার নাই, সিসি ক্যামেরার ভিডিও স্বাক্ষী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এসময় কাঁদতে কাঁদতে পড়ে যান নিহতের বৃদ্ধ নানা আমছের আলী। তিনিও আহাজারীতে বলেন, আমার একটা মাত্র নাতিগো। আমার নানা মরলো কেন? যারা নানা ভাইরে মারছে, তাগো ফাঁসি চাই। নানা প্রলাপে আহাজারী করেন নিহতের বৃদ্ধা দাদী মহরজান, বড় ফুফু আসমা বেগম, মামা হারুণ মিয়াসহ অন্যান্য স্বজনরা। তাদের আহাজারীতে কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে মানববন্ধনস্থল।
পরে আল আমিন মরলো কেন? জবাব চাই, প্রশাসন চুপ কেন? জবাব চাইসহ নানা শ্লোগানে ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে মানববন্ধনের অংশগ্রহণকারীরা।
মিছিলটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও চন্দ্রা-বলিয়াদি আঞ্চলিক সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরিবারের সদস্য ছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের সসদ্য ফরহাদ হোসেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আজাদ কামাল সোহানসহ আরো অনেকে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী।
এসময় বক্তারা বলেন, ওই কলেজের র্যাগ-ডে অনুষ্ঠানের শুধু অনাকাঙ্খিত ঘটনাই নয়, ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনের হত্যাকান্ডে নানা রহশ্যের ইঙ্গিত করে। গুটি কয়েক লোকের জন্য ৯ বছর আগে যুবলীগ নেতা রফিকুল ও দুইদিন আগে ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। তাদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনলে আর এমন নৃশংস ঘটনা ঘটবে না। তবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আল আমিনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী দেওয়া হবে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী, ইউএনওসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ওই মানববন্ধন শেষে রোববার কলেজের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে কালিয়াকৈর থানার এসআই জামিনুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাতে উপজেলার কালামপুর এলাকা থেকে কালিয়াকৈর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার কালামপুর এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম জানান, আল আমিনের হত্যাকান্ডের ঘটনায় মিলন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ০৮//২০২৪