- ঠিকাদারের কারনে নিরাপত্তার সংকটে শত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম
- রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ‘হাই প্রোফাইল ঠিকাদার-এ জিম্মি সংশ্লিষ্টরা !
নির্মানাধীন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পটি রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ‘হাই প্রোফাইল ঠিকাদার’ প্রতিষ্ঠানের জিম্মিদশায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এর বর্হিবিভাগ চালুর বিষয়টি। অভিযোগ উঠেছে নির্মান কাজের ধীর গতির। এতে চরম নিরাপত্তার সংকটে হাসপাতাল ভবনে অরক্ষিত শত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রকল্প পরিচালক এবং গণপূর্ত বিভাগ ‘দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও গণপূর্ত বিভাগের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে একাধিকবার পত্র দিয়েছে। নির্মাণ বিধি লংঘন ও অবহেলার অভিযোগে একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে বলে দাবি করেন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। হাসপাতালের বর্হিবিভাগ পূর্ব নির্ধারিত ৩০ জুন চালু না হওয়ায় জেলাবাসী স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ নিয়ে হতাশ। দায় সংশ্লিষ্টরা দুষছেন পরষ্পরকে। এবিষয়ে মুঠোফোনে আলাপকালে ‘হাই প্রোফাইল ঠিকাদার’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান জহিরুল লি: এর স্বত্বাধিকারী বলেন, ওখানে কোথায় কি কাজ হচ্ছে সেবিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এবং গণপূর্ত বিভাগ যেটা বলবেন সেটাই সঠিক’।
সরেজমিন আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক হাসপাতাল ভবনে নিযুক্ত ভান্ডার কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন,‘বিদ্যমান অবস্থায় হাসপাতাল ভবন চালু করতে গেলে এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। এখানে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জামাদি চরম অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বিক্ষিপ্ত ভাবে রাখা আছে। যে কোন সময় বড় কোন অনিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত এর ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত বিভাগকে একাধিকবার বলেছি; কিন্তু এই ১০ দিন, ১৫দিন এক মাস করে ইতোমধ্যে ৪মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আদৌ এই কাজ কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত’।
কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি হাজি গোলাম মহসিনের অভিযোগ, ‘শুরু থেকে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দুর্নীতির কারনে ইতোমধ্যে নির্মানকাজে প্রায় একযুগ সময় পার করেছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মান প্রকল্প। একাধিকবার সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনা করেও জেলার স্বাস্থ্য সেবার এই প্রতিষ্ঠানটি আজও পর্যন্ত ঝুলে আছে। দ্রুত বিদ্যমান এই পরিস্থিতির নিরসনসহ দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন’। তিনি বলেন আমরা কেউই আইনের উর্দ্ধে নই, যতই প্রভাবশালী বা রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হোক না কেন, জনস্বার্থে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগ। তারা কোন ব্যবস্থা না নিলে বুঝতে বাকি থাকে না যে, ‘ডাল মে কুচ কালা হে’।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন,‘যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম অবহেলায় নির্মানাধীন ছাদ ধ্বসে শ্রমিকের মৃত্যু হলো, অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত হলো, সেই একই প্রতিষ্ঠান এখনও সেখানে বহাল আছে কোন অদৃশ্য শক্তির মদদে’?
প্রকল্প দপ্তর সূত্রের তথ্যে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে অনুমোদন প্রাপ্ত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মান প্রকল্পের নির্মান শেষ করে ২০১৮ সালের ৩০জুন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু এই প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রাপ্ত নির্মানকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নানা অনিয়ম ও জটিলতা সৃষ্টি করে ধাপে ধাপে একাধিকবার প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বশেষ এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬শ ৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এবং নির্মান বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়সীমা বেধে দেয়া হয় ৩০জুন ২০২৩ পর্যন্ত।
২৫০শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: তাপস কুমার সরকার জানান,‘জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় আশপাশের ৪/৫ জেলার রোগীরা মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিতে ভীড় করছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী হাসপাতাল আমাদের এখানে। এখানে প্রতিদিন ২ হাজারের অধিক বর্হিবিভাগ এবং ৮শতাধিক ভর্তি রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এই অধিক চাপ সামলাতে গিয়ে আমাদের চিকিৎসকরাও নানাবিধ ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্রুত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চালু হলে আগত রোগীদের মানসম্মত উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাবে’।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: দেলদার হোসেন বলেন, ‘নানাবিধ অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে একদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের উন্নত সেবা এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহন সহ তাদের দ্বারা রোগীদের কাঙ্খিত সেবা প্রদান ব্যহত হচ্ছে। এতে, রোগীরাও বি ত হচ্ছেন প্রত্যাশিত মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা থেকে।
প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী ডা: সরয়ার জাহান জানান,‘নির্মাণ শেষ করে ৩০জুন,২০২৩ পূর্ব নির্ধারিত সময়ে হাসপাতাল ভবনটি চালু করতে না পারায়, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত বিভাগের উর্দ্ধতন মহলে একাধিকবার তাগাদা পত্র দেয়া হয়েছে। এখানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝিমিয়ে পড়া নির্মান কাজটিকে গতিশীল করা।
গণপূর্ত বিভাগ কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানত নির্মান কাজের ধীর গতির কারনে নির্ধারিত ৩০জুনের মধ্যে হাসপাতাল ভবনটি চালু করা যায়নি। তবে এখন চলমান কাজগুলি শেষ করে খুব শীঘ্রই অন্তত বর্হিবিভাগটা চালু করার জন্য হস্তান্তর করতে পারব। তিনি জানান, কাজের গতি বাড়াতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে একাধিক তাগাদা পত্র দেয়াসহ জরিমানাও করা হয়েছে। বর্তমানে বর্হিবিভাগের রাস্তা ও ড্রেন নির্মানসহ পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের চলমান কাজ দ্রুত শেষ করে হাসপাতাল ভবন চালু করা হবে’।
কুষ্টিয়া মেডিকেলের চলমান নির্মাণ কাজ কোথায় কিভাবে হচ্ছে বা কি অবস্থায় আছে কবে নাগাদ শেষ হবে সেবিষয়ে প্রকল্প অফিস এবং গণপূর্ত বিভাগ ভালো বলতে পারবেন বলে জানালেন হাই প্রোফাইল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জহিরুল লি: এর কর্নধার মো: জহিরুল ইসলাম।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ১৪,২০২৩//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post