রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গুয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। এটা বাংলাদেশের একমাত্র এবং পৃথিবীর মাত্র কয়েকটির মধ্যে একটি। এর আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর। স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ “রাতা গাছ” এর নামানুসারে এর নাম হয়েছে রাতারগুল।
গত শুক্রবার ৪ অক্টোবর/১৯ সপরিবারে গিয়েছিলাম। অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা নিতে। মনে হলো ঢুকছি বুঝি সুন্দরবনে। কাঠের ছোট্ট নৌকা। মাঝি ১০/১২ বছরের বালক মাছুম। নামের সাথে মনের মিল যথেষ্ট। দুই ঘন্টা জলা জঙ্গলের ডিঙ্গিতে বৈঠা মেরে পাবে ১০০টাকা। আনান্দে সে মশগুল।
“মাঝি বাইয়া যাওরে—- থেকে শুরু করে কথা সুর ও সমাপ্তির প্রতি খেয়াল না রেখেই বাংলা হিন্দি মিলিয়ে গেয়েছিলো গোটা ত্রিশেখ গান। কঁচি কণ্ঠের মোহিত করা সুর নিস্তব্ধ জলাবনে দিল অন্যরকম অনুভূতি।
খুবই সরু নালা খাল দিয়ে বয়ে চলেছে নৌকা। ঘন ঝোপ জঙ্গলের লতাগুল্মের শাখাপ্রশাখায় বাঘ নেই তা নিশ্চিত। তবে জলজ ও গেছো সাপ, জোক ও বিষাক্ত পোকামাকড় কখন যে কাকে কামড়ায় তা বলা মুশকিল। সরু খালের মুক্ত জায়গায় শাখা প্রশাখা মেলে থাকা গাছের ডাল ও লতাপাতা যেন আমাদের গা ছুয়ে ভয় পাইয়ে দিতে ব্যাস্ত। কোথাও হাত দিয়ে সরিয়ে কোথাও শুয়ে পড়ে লতাপাতার অযাচিত আলিঙ্গন এড়াতে হলো।
জলাবনের ভিতর আছে একটা অবজারভেশন টাওয়ার। টাওয়ারে উঠে দেখালাম চারপাশ। নিলাম অনেকগুলো ছবি। নিচে নৌকায় বসেছে চা-বিস্কুটের দোকান। আমড়া চা পিঠা দশ টাকা।
জঙ্গল থেকে বেরোবার পথ অনেকটা প্রশস্ত। এ পথে লতাপাতার অতটা উপদ্রব নেই। এপথে রয়েছে বড়বড় গাছের ডাল। বে খেয়াল হলে ফেটে যেতে পারে মাথা ভেঙ্গে যেতে পারে অস্থি।
পানির উপর প্রসারিত মোটা ডালে বসে সেলফি নেওয়ার শখ জাগতেই পারে। নিতেও পারেন। তবে দেখেশুনে উঠবেন। ডাল ভেঙ্গে যেতে পারে আবার গাছও উপড়ে যেতে পারে। ওইসব গাছে বিচ্ছু বিষাক্ত পিঁপড়া বা পোকামাকড়ও থাকতে পারে। এসবের ভয়ে শখের মাথায় বাড়ি দেওয়ার দরকার নেই। একটু দেখেশুনে উঠলে এমন কোন সমস্যা নাও হতে পারে।
জঙ্গল থেকে বেরিয়ে মুল নদী পাবেন। এই নদীতে তেমন স্রোত না থাকলেও আছে ছোট বড় যান্ত্রিক জলযান চলার ঢেউ। সেই ঢেউ ছোট নৌকাটিকে দুলিয়ে আপনাকে করবে আনান্দিত। মনে হবে নৌকাটি বুঝি তার কোলে বসিয়ে আপনার মনে বুনে দিচ্ছে আবারো জলাবন ভ্রমণের অনুপ্রেরণার বীজ।
কিভাবে যাবেন জলাবনেঃ
সিলেট শহরের আম্বারখানার কোন হোটেলে উঠে ফ্রেস হয়ে রাতারগুল যাওয়ার জন্য সিএনজি নিবেন। ভাড়া ৩০০টাকা। সেটাতে অথবা নিজস্ব যানে এয়ারপোর্ট রোড ধরে এগিয়ে যাওয়ার পথে ডানে পাবেন বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক। এই পথে বিমানবন্দরের পিছনের বাউন্ডারি হয়ে কিছুদুর যাওয়ার পর পাথর ভাঙ্গার কারখানা পাবেন। সেখান থেকে ডানের রোড ধরে যাবেন মোটরঘাট। সেখানে আছে গাড়ি পার্কিং।
গাড়ি রেখে যাবেন ঘাটে। সেখানে আটজনের নৌকার ভাড়া ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। লাইফ জ্যাকেট ১০০ ছাতা ৫০ টাকা ভাড়া। মন চাইলে নিন না চাইলে না। তবে সাঁতার না জানাদের এব্যাপারে কার্পণ্য না করাই নিরাপদ।
সব মিলিয়ে সময় লাগতে পারে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা। দুরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার।
Discussion about this post