মোঃ আউয়াল হোসেন পাটোয়ারী, রামগঞ্জ লক্ষ্মীপুর থেকেঃ মহান ভাষা আন্দোলনের ৭০বছর পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।
এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে বাঁশ, কাগজ ও ককশিট দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
১৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। আর যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। কতৃপক্ষের উদাসীনতায় ও সংরক্ষনের অভাবে সেগুলোও প্রায় বছরজুড়ে অবহেলিত ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে রামগঞ্জ স্টেশন মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য আংগারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কাজিরখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামগঞ্জ রাব্বানিয়া কামিল মাদ্রাসা, রামগঞ্জ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, অভিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ প্রায় শতাধীক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি।
উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলার মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬১টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৫টি, মাদ্রাসার সংখ্যা ২৬টি, কলেজের সংখ্যা ৭টি সহ মোট ২২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠন রয়েছে।
অভিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল, রহিম, আয়েশা, ইয়াছমিনসহ অন্যানারা বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির দিন আমাদের বড় ভাইয়েরা বাঁশ, কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে। আমরা ওখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।
রামগঞ্জ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সালমা, পারভীন, ইশা, সুমিসহ অন্যানারা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে তারা ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করে। আমাদের মাদ্রাসায় শহীদ মিনার না থাকায় দিনটি পালন করতে দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে উপজেলা পরিষদের শহীদে মিনারে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়।
কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শহীদ মিনার না থাকায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে দূরবর্তী উপজেলা শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে অনেক সময় তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। মহান মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুলে বাধ্যতামূলক শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানান তারা।
রামগঞ্জ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার শামসুল ইসলাম জানান, শহীদ মিনার না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষ্যে ওই দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের শহীদে মিনারে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনার নির্মানে করতে কোন অর্থ বরাদ্দ পায়নি, তবে বরাদ্দ পেলে শহীদ মিনার নির্মান করবে তারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ আহম্মেদ বলেন, স্কুল পর্যায় থেকে সকল শিক্ষার্থীদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান করা জরুরী।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবদুল মোহাইমেন জানান, জায়গা সংকটের কারণে কিছু কিছু স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আমরাও চাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। যাতে স্কুল পর্যায় থেকেই সকল শিক্ষার্থীরা মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। যে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেগুলোতে খুব শীগ্রই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোনাজের রশিদ বলেন, কিছু কিছু বিদ্যালয় শহীদ মিনার না থাকায় অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয় শিক্ষার্থীদের। শীগ্রই প্রত্যকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবীবা মীরা জানান, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলো চিহ্নিত করে এবং যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবহেলিত অবস্থায় আছে সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলার প্রত্যকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা অফিসগুলোকে নির্দেশ দেয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post