মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্টের দৈন্যদশা থেকে মুক্তি মিলছে না।
বহুদিন ধরে। সারাবছরই এ সড়কের বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরা থাকে। দেখে মনে হবে যেন এক একটি পুকুর। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে ৪ ইউনিয়নের কয়েকশ মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীো চলাচল করেন। এছাড়াও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের লোকজনও সড়কটি ব্যবহার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বার বার সংস্কার করা হলেও তা বেশিদিন টিকছে না। না টেকার অন্যতম কারণ হিসেবে এলাকাবাসীর দাবি প্রতি রাতে কয়েকশ মাছ বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। মাছের ড্রাম থেকে ক্যামিকেল যুক্ত পানি সড়কে পড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। তবে মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি, সড়কটি সংস্কার নিম্নমানের হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু মুহুরী প্রকল্পে হাজার হাজার একর মৎস্য ঘের আছে, তাই প্রকল্পের মাছগুলো এ সড়ক দিয়ে আড়তে নিতে হয়। আমরা কি করবো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে ছোট-বড় খানাখন্দ। হেলেদুলে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন। বৃষ্টি হলে গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকে। সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। গর্তে পড়ে নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি দিয়ে মীরসরাইয়ের চারটি ইউনিয়ন ছাড়াও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার অনেক মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন জোরারগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজসহ আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মীরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজীর প্রায় ১২ হাজার একর খামারের মাছ ও খাদ্য পরিবহন করা হয় সড়কটি দিয়ে।
সড়কের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে পশ্চিম দিকে ইছামতি মন্দির পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক যাতায়াত উপযোগী থাকলেও বাকি চার কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দে ভরা। এর মধ্যে বিষুমিয়ারহাট থেকে আজমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে রয়েছে বড় বড় গর্ত।
সড়কটি দিয়ে মিনিবাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে প্রায় ৪০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
জোরারগঞ্জ মুহুরীপ্রজেক্ট, টেকের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এ সড়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেহাল দশার দিক থেকে এক নম্বরে। উপজেলাজুড়ে এমন খারাপ রাস্তা আর একটিও নেই। বলতে গেলে পেটের দায়ে চালকরা সড়কটিতে প্রাণ হাতে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রতিদিন গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা ও নানা যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। আরেক অটোরিকশা চালক জাফর আহম্মদ বলেন, দুই বছরে কয়েকবার সড়কটির কিছু অংশ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়ায় তাতে কোনো লাভ হয়নি। কলেজ শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম তারেক বলেন, দেড় বছর ধরে সড়কটির খারাপ অবস্থা। সড়কটির সংস্কার করা গেলে মানুষের দুর্ভোগ কমতো। মাছবোঝাই ট্রাকের কারণে সড়ক দ্রুত নষ্টে যায়।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের যাতায়াতের সড়কটি ভাঙ্গা হওয়াতে আমরা বিপদ আপদে কারো সেবা পাইনা। এই রাস্তা দিয়ে একটা এ্যাম্বুল্যান্স যাতায়াত করতে পারেনা। অসুস্হ গর্ভবতী মা বোনদের হাসপাতালে নিতে গেলে অনেক ভোগান্তী পোহাতে হয়। একদিকে সময় অপচয় হয় অন্যদিকে ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, এ সড়কের কারণে আমদেরও কষ্টে যাতায়াত করতে হয়। উপজেলা সমন্বয় সভায় অনেকবার বলেছি। তিনি আরও বলেন, এটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে। এর আগে কয়েক দফায় সড়কটির কিছু অংশ সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজে এক মাসও টেকেনি। এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রণি সাহা বলেন, জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়কটি ক্যামিকেল যুক্ত পানি পড়ে নষ্ট হয়। সংস্কার করলেও টেকে না। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা এ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে জীবিত মাছ পরিবহন করা হয়। এসব যানবাহন থেকে নিয়মিত পানি ছিটকে পড়ায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা যাবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post