পরিচিতিঃ
লটকন এক প্রকার দেশীয় ও অপ্রচলিত টক মিষ্টি ফল। সাধারণত মিষ্টি ফল হলেও ছায়া যুক্ত জায়গায় এই গাছের ফল টক স্বাদযুক্ত। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে এটি পরিপক্ক হয়। ফল গোলাকার ও পাকা অবস্থায় হলুদ। ফলের খোসা নরম ও পুরু। প্রতি ফলে ২-৫টি বীজ থাকে।
ইংরেজি নামঃ Burmese grape.
বৈজ্ঞানিক নামঃ Baccaurea motleyana.
পরিবারঃ Phyllanthaceae
অন্যান্য নামঃ
লটকনের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন- হাড়ফাটা, ডুবি, কানাইজু, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি। তাছাড়া নটকোনা, লটকা, আঁশফল ইত্যাদি আঞ্চলিক নামও আছে। বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এটি বুবি (Bubi) নামে সর্বাধিক পরিচিত।
বর্ণনাঃ
লটকন মাঝারি আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। গাছ ৯-১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এর কান্ড বেঁটে এবং উপরাংশে ঝোপালো। পুং এবং স্ত্রী গাছ আলাদা; যাতে আলাদা ধরনের হলুদ ফুল হয়। উভয় ফুলই সুগন্ধযুক্ত। ফলের আকার ২-৫ সেমি হয় যা থোকায় থোকায় ধরে। ফল গোলাকার, পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ফলের খোসা ছাড়ালে ২-৫টি বীজ পাওয়া যায়। বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া হয় বা জ্যাম তৈরি করা হয়। গাছের ছাল থেকেও রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সূতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়। এর কাঠ নিম্নমানের।
চাষাবাদঃ
লটকন দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। উৎপাদনের পরিমাণ বেশি না হলেও এটি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে চাষ হচ্ছে। যেমন- নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলায় লটকন চাষ বেশি হয়। তন্মধ্যে নরসিংদী জেলার শিবপুর, রায়পুরা ও বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হয়। নরসিংদির লটকনের স্বাদ অত্যন্ত বেশি এবং সারাদেশ ব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে লটকন বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
লটকনের পুষ্টিগুণঃ
লটকন অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি ফল। পরিপক্ক লটকনের প্রতি ১০০ গ্রাম শাঁসে রয়েছে ১.৪২ গ্রাম আমিষ, ০.৪৫ গ্রাম চর্বি, ০.৯ গ্রাম মোট খনিজ পদার্থ, ০.৩ গ্রাম লৌহ এবং ৯১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি। এছাড়াও লটকনে রয়েছে ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি১ এবং ০.১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি২। সাধারণত লটকনকে ভিটামিন-বি২ সমৃদ্ধ ফল বলা হয়ে থাকে। এই ফলে চর্বি অত্যন্ত কম থাকায় ও কোন শর্করা নেই বিধায় সকল বয়সের মানুষ নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
লটকনের ঔষধিগুণঃ
লটকনের যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি তার ঔষধিগুণও রয়েছে। যেমন-
(১) লটকন অম্লমধুর ফল। এটি খেলে মুখের স্বাদ এবং খাবারের রুচি বাড়ে।
(২) লটকন খাদ্যমানেও সমৃদ্ধ।
(৩) ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় ও তৃষ্ণা নিবারণ হয়।
(৪) লটকনের পাতা শুকনো করে গুঁড়া করে খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমে।
(৫) লটকনে পর্যাপ্ত আয়রন বা লৌহ থাকায় দেহের রক্তশূন্যতা দূর হয়।
(৬) লটকনে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড ও এনজাইম যা দেহ গঠন ও কোষ কলার সুস্থতায় সহায়তা করে।
লটকন ও রথযাত্রাঃ
রথযাত্রার সাথে লটকন ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। আষাঢ়ের রথযাত্রা উৎসবে ‘হরিরলুট’ (ফল বিতরণ) এর কলা, আনারস, নারিকেল এর পাশাপাশি লটকনও হরিরলুট এর অন্যতম ফল। রথযাত্রার দিন ও উল্টো রথের দিন লটকন কেনার প্রচলন আছে।
বাংলাদেশের ধামরাই ও টাঙ্গাইল রথে লটকনের প্রচলন আছে। ভারতেও কোচবিহার, নবদ্বীপ ইত্যাদি স্থানে রথের দিন লটকন বিক্রি হয়।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post