শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে সুভাসিত পথ ঘাট। প্রতিটি ফসলের মাঠে ও বাড়ির উঠানে ধান শুকানোর দৃশ্যকে মনে হয় যেন সোনা বিছিয়ে শুকাচ্ছে।
লালমনিরহাটের প্রতিটি গ্রামের পথে ঘাটে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে সুভাসিত করে তুলেছে। গ্রামে গ্রামে কৃষক পরিবারে চলছে নবান্নের উৎসব। এ বছর অনুকূল আবহাওয়া ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে চাঙ্গাভাব। গ্রামে কৃষিক শ্রমিক যেমন কাজ পেয়ে খুশি। কৃষি শ্রমিককের পকেটে আছে নগদ অর্থ। তেমনি গ্রামের কৃষক পরিবার গোলায় ধান তুলতে পেরে খুশি। এই ধান তার অর্থ। ধান বিক্রি করে কৃষক তার পরিবারের সকল চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এ বছর মোটামুটি ধানের বাজারও তুলনামূলক ভাল।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) সুত্রে জানা গেছে, ধান গবেষণায় আবিষ্কার মঙ্গাজয়ী স্বল্পমেয়াদী আমন ধান ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৫৭, বিনা ধান-৭ সহ অন্যান্য কয়েকটি উচ্চফলনশীল জাতের ধানের কারণেই আশ্বিন মাসেই কৃষক পরিবারে ঘরে ঘরে নতুন ধান উঠেছে। উত্তরাঞ্চলের গ্রামে এখন আগুর নতুন ধানের নবান্ন উৎসব হয়। এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, নতুন জাতের ধানগুলো রোপণের পর মাত্র ৯০-১০০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পেকে যায়। অথচ প্রচলিত জাতের গতানুগতিক ধানগুলো রোপণের প্রায় ১৪০-১৫০ দিন পরে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাকে। নতুন জাতের ধান আগেভাগে কাটা যায় বলে কৃষক দুই মাস আগেই তাদের জমি খালি পেয়ে যান। ফলে তারা প্রথমবার আগাম জাতের আলু আবাদ করে, দ্বিতীয়বার আবার আলু কিংবা অন্য যেকোনো রবি ফসল আবাদ করতে পারেন। পরে তারা ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধিকতর লাভবান হতে পারছেন। এখন এক জমিতে বছরে ৩-৪ টি ফসল অনাসে চাষাবাদ করা যাচ্ছে। এখন জমি আর ফেলে রাখতে হচ্ছে না।
উত্তরের রংপুরে ১৫-১৬ বছর আগে আশ্বিন কার্তিক মাস মানেই মঙ্গা বা দুভিক্ষাবস্থা ছিল। এখন সেই দুর্দিন নেই। সুদিন ফিরেছে সেটাও বলা যায় না। এ বছর নতুন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের উর্ধ্বগতি। ধানের দামের চেয়ে চালের দাম অনেক বেশী বাজারে। চালের বাজার কিছুটা কমতে পারে। লালমনিরহাট সহ রংপুরের জেলা গুলোতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ৯০ ভাগ আমন ধান কেটে কৃষক পরিবার গুলো গোলায় তুলেছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ৮৪ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদন চালে ধরা হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার ৩৫০ মেঃটন।