লালমনিরহাটের একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দির। শতাধিক বছর ধরে মসজিদ – মন্দির একই চত্বরে দুই ধর্মের মানুষে ধর্মী আরাধ্যের প্রতীক। জেলা শহরের কালিবাড়ী পুরানবাজারে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এাঁ এখন সকল ধর্মের মানুষের কাছে পর্যটন কেন্দ্র ও র্তীথস্থান।
বয়ঃবৃদ্ধ গণ জানা যায়, ১৮৩৬ সালে নেছারাম নামে এক মারওয়ারী এই মন্দিরটি নির্মান করেন। তিনি মন্দিরের পাশেই পুরোহিতের বাসবাসের ব্যবস্থা করেন। সেই সময় লালমনিরহাট ছিল ব্যবসা- বাণিজ্যের স্বর্ণদ্বার। এখানে ছিল অটো রাইচমিল, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর আদমজি জুট মিলের পাটক্রয় কেন্দ্র। ছোট বড় শিল্প কলকারখানা। হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা – বাণিজ্যের প্রাণ কেন্দ্র। রেল কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যবস্থা করাচি, কুচবিহার, র্দাজিলিং, কলিকাতা, নেপাল পর্যন্ত। এখনো রেলওয়ে সংযোগের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
ব্যবসা – বাণিজ্যে সেই সময় হিন্দু মারওয়ারিগণ নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরবর্তীতে উনিশ শতকের দিকে কিছু মসুলিম ব্যবসা – বানিজ্যে যুক্ত হয়। ফলে কালীমন্দিরের পাশে তাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে নামাজ ঘর নির্মাণ করা হয়। সেই শুরু মন্দির ঘেঁষে নির্মিত হয় আজকের পুরান বাজার জামে মসজিদ। তখন হতে একই উঠানে চলছে দুই উপসানালয়ের ধর্মীয় সংস্কৃতি। পূজা এলে মন্দির ও মসজিদ কমিটির লোকজন বসে সিদ্বান্ত নেন। নমাজের সময় ওলু ধ্বনি ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার সাময়িক স্থগিত থাকবে। জামাতের সাথে নামাজ শেষে শুরু হয়ে যায় উলুধ্বনি , ঢাকের বাজনাসহ পূজা অর্চনা। শতবছরে কখনো দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে ধর্ম পালনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বরং দুই ধর্মের মানুষ এই মসজিদ মন্দির নিয়ে রয়েছে সম্প্রীতির অনুকরুনীয় দৃষ্টান্ত।
এই মসজিদ মন্দির পরিদর্শন করেন, আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত ডেন মর্জিনা, ভারতের রাষ্ট্রদূত, সম্প্রতি লালমনিরহাটে পূজামন্ড পরিদর্শন করেন নেপালের রাষ্ট্রদূত শ্রী ঘনশ্যাম ভান্ডারী। তিনি একই আঙ্গিনায় মসজিদ মন্দির দেখে অভিভূত ও বিস্মিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এই ধরনের দৃষ্টান্ত বিশে^ খুবই কম রয়েছে। কালীবাড়ী ব্যবসায়ী ও পুরানবাজার জামে মসজিদের সহ-সভাপতি হাজী আব্দুল বাতেন জানান, ১৯১৫ সালের দিকে এই মসজিদ নির্মিত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন। এটি ধর্মীয় সম্প্রীতির এক বড় উদাহরণ।
পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ইসলাম ধর্মের এটাই সৌন্দর্য। ইসলাম যার যার ধর্ম সে পালন করার শিক্ষা দেয়। নবী করিম হয়রত মোহাম্মদ সঃ অন্য ধর্মেও কোন মানুষ ধর্ম পালনে সহায়তা চাইলে সহায়তা দিতে বলে ছিলেন। কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী জানান, মন্দিরের নামানুসারে এলাকার নামকরন হয় কালীবাড়ী। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম। ধর্ম পালনে কোন সমস্যা নেই।
এ বছর মসজিদ – মন্দিরের সামনের ফাঁকা জায়গা সংকোচিত হয়েছে। এই চত্বরে জনৈক ব্যবসায়ির ১০/১২ শতাংশ জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। এতোদিন সেখানে বাঁশ বিক্রির বাজার বসত। তিনি বর্তমানে তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জমিটি প্রাচীর নির্মাণ করেছে। তাই মসজিদ – মন্দিরের জায়গা সংকোচিত হয়েছে। মসজিদ ও মন্দির কমিটি ও জেলাবাসীর দাবি মসজিদ মন্দির টির সৌহার্দ্য ।
দেশতথ্য// জা// ০৫-১০-২০২২//