চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক টু শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণপাড়ের নিচ পর্যন্ত শিকলবাহা সড়ক যেন ট্রাক স্ট্যান্ড পরিণত হয়েছে। এতে এলাকার মানুষের নানা ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়কের টোল প্লাজার পাশেই লম্বা সারিতে পার্ক করা হয় ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ ট্রাক।
এতে সংকুচিত হয়ে পড়ে সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন। প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। কখনো কখনো সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক যানজট। ফলে, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার সামান্য বৃষ্টি হলে সড়ক ভাগাড়ে পরিনত হয়। সড়কটি শুস্ক মৌসুমে ধূলোময় ও বর্ষার মৌসুমে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, এ সড়কে ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ ট্রাক দাঁড়ানোর কারণ হলো-এখানে রয়েছে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম সিমেন্ট লিঃ, শাহ আমানত এগ্রো, কামাল ব্রাদার্স সিএনজি স্টেশন, মর্ডান পলি ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, আগে আল্লাহ মোটরস, সিজার এপারেলস, স্বাধীন গ্রুপ, এম এস কর্ণফুলী স্টীল এন্টারপ্রাইজ, খাজা গরিবে নেওয়াজ প্যাকিং ও এস আলম স্টীল লিঃ সহ একাধিক মিলকারখানা, ফ্যাক্টরী ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এখানে এসে এসব ট্রাক ও যান থামতেই জোন হিসেবে কয়েকজন চাঁদা আদায় করেন। প্রতি গাড়ি থেকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে। প্রতিদিন কয়েক শতাধিক গাড়ি আসে। চাঁদা উত্তোলনে শুক্কুর ও বাহাদুর নামে দুজনের নামে প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
এসব চাঁদা কার কাছে পৌঁছে সে বিষয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। মাসে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। আবার অনেকেই জানান, রাতের আধারে তেল ও চুরি হচ্ছে। এ চুরি সিন্ডিকেটের সাথে শিকলবাহার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত বলে জানা যায়।
কিন্তু ভারি ট্রাকের দখলে থাকায় সড়ক খানাখন্দ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত এখানে ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ পার্কিং বন্ধ করা হোক। কারখানার ভেতর পার্কিং ব্যবস্থা করা হোক। যদিও কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, ভালো গ্যারেজ না থাকা, চালক ও সহকারীদের খাবারের সুবিধা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁদের এখানে পার্ক করতে হচ্ছে। যদিও পাশের ট্রাফিক পুলিশ এ বিষয়ে অনেকটা নীরব। স্থানীয় চেয়ারম্যানকেও এ বিষয়ে তেমন উদ্যোগ নিতে দেখেননি বলে এলাকার লোকজন জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মইজ্জ্যারটেক গোলচত্বর থেকে শিকলবাহা নতুন ব্রিজের নিচ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে শতাধিক ট্রাকসহ অন্যান্য যান দাঁড় করানো। কিছু ট্রাক সরাসরি মহাসড়কের ওপরেই রয়েছে। এতে মূল সড়কে চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে।
ট্রাকচালক বেলাল বলেন, ‘অনেক সময় মালামাল লোড-আনলোড করতে সময় লেগে যায়। সে জন্য রাস্তায় পার্ক করি। সেজন্য টাকা দিতে হয়।’ শিকলবাহা এলাকার শিক্ষার্থী এহসান জানায়, ‘প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় তাকে এ পথ দিয়েই সাইকেল চালিয়ে যেতে হয়। দুপাশে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে সড়ক সরু হয়ে পড়ে। তাই রিকশা, অটোরিকশা, সাইকেলসহ স্থানীয় যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। তাঁকেও ঝুঁকি নিয়ে রোজ কলেজে যেতে হয়।’
শিকলবাহা ইউনিয়নের মেসার্স শাহ্ আমান এন্টার প্রাইজ সহকারি পরিচালক ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘এভাবে সড়কের দুই পাশে গাড়ি পার্ক করায় হাঁটা চলা দায় হয়ে পড়েছে। এখান থেকে ট্রাকসহ অন্য যানবাহনের স্ট্যান্ড সরানোটা খুবই প্রয়োজন। আমরা নিজেরাও এটার ভুক্তভোগি। কিছু বলতে পারছি না।’
রাস্তায় হাঁটতে থাকা জসিম উদ্দিন নামের এক পথচারী বলেন, ‘সড়ক দখল করে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পথচারীদের নিয়মিত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়।’
কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক ট্রাফিক পুলিশ বক্সের (ট্রাফিক ইনচার্জ) টিআই মো. শাহ আরিফ এর সাথে কথা বলতে চাইলে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর সহকারি জানান তিনি ছুটিতে আছেন, অসুস্থ্য। অতীতে কর্ণফুলী জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) মো. মাসুদ রানা বেশ কয়েকবার সড়ক থেকে এসব গাড়িগুলো সরানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তিনি বদলি হওয়ার পর বরাবরেই আগের মতো অবস্থা।
কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নজরদারির অভাবে ট্রাকের দখলে কিনা সড়কটি জানতে চাইলে শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার পরিচালক (অপারেশন) অপূর্ব সাহা বলেন, ‘কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযানের পরও পুরোপুরি দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পথচারীদের হাঁটা-চলায় সমস্যা হচ্ছে তা সঠিক। বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনও চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী জানান, ‘সড়ক থেকে গাড়ি সরিয়ে রাখার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেননা, সড়কে বিভিন্ন যানবাহন রেখে সাধারণ মানুষের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ১৪,২০২৩//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post