মনিরুজ্জামান জুলেট, শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ দিনে-রাতে মিলিয়ে জেলা শহরে ৬/৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও করুণ।
ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর লোডশেডিংয়ের কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্যে নেমে এনেছে স্থবিরতা।
বিদ্যুতের অভাবে মুসল্লীদের নামাজ আদায় করতে কষ্ট হচ্ছে।
শহর কিংবা গ্রাম কোথাও মিলছে না স্বস্তি। সব জায়গায় একই অবস্থা। এই অবস্থা যেন একেবারেই কাহিল। গরমে-লোডশেডিংয়ে জীবন যায় যায় অবস্থা। বিদ্যুৎ না থাকায় গরুর ফার্ম, মুরগীর ফার্মে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। অনেকের গরু ও মুরগী অতিরিক্ত গরমে মরে যাবারও খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ বিতরণে সরকারী কোন ধরণের ঘোষণারই বাস্তব প্রতিফলন ঘটছে না। এক নাগারে এক দুই ঘন্টাও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে
রাতে বিদ্যুৎ না থাকা গরমে অতিষ্ট মানুষ ঘুমাতে পারছে না। ঠিকমত ঘুমাতে না পারায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক মানুষ।
এবারের পুরো বর্ষার মৌসুম যাচ্ছে বৃষ্টিহীন। শুরু হয়েছে আষাঢ়ের খর উত্তাপ গরম। এই গরমে এমনিতেই নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে শ্যামনগর জনজীবন। তার ওপর এই তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় শ্যামনগরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।
প্রচন্ড গরম এড়িয়ে যেতে পুকুরপাড়ে, পুরুষরা খালি গায়ে গাছের নিচে, কেউ কেউ লেবু আর চিনি মিশিয়ে শরবত খেতে, ঘনঘন গোসল করতে, ডাবের পানিতে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে, শিশুরা মাটিতে গড়াগড়ি করছে, বৃদ্ধরা হাত পাখায় বাতাস করছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই গরমের মধ্যে প্রতিদিনই মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। রাত-দিন অনবরত লোডশেডিংয়ের ফলে জীবনযাপন হয়ে উঠেছে অসহনীয় কষ্টের। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হলেও ঘরেও থাকা যাচ্ছে না। কারণ বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ার বিষয়টি এখন নিত্যনৈমত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যরাত কিংবা ভোরেও বিদ্যুৎহীনতার যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষকে। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ঘটছে ব্যাঘাত।
শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী এনজিও কর্মকর্তা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রচন্ড গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ায় আমাদের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পরছে। ১/২ ঘন্টা লোড শেডিংয়ের কথা বলা হলেও রাতের বেলায় ২/৩ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। তাও আবার একবার আসলে আধা ঘন্টা এক ঘন্টা পড়েই আবার চলে যায়। বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে পরছি বিপাকে। রাতে বিদ্যুত থাকে না বললেই চলে।
এনজিএফ শাখা ব্যবস্থাপক সফিউল আলম লাভলু বলেন, শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো ভয়াবহ। দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে ৮/৯ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পায় না শ্যামনগর উপজেলা কৈখালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন। ফলে প্রাকৃতিক বাতাসের ওপরই নির্ভর করছে তাদের শান্তি ও স্বস্তি। কিন্তু এবার প্রকৃতিও শুরু করেছে বিরূপ আচরণ। পুরো বর্ষায় বৃষ্টির দেখা মেলিনি। বর্ষার শেষে আষাঢ়ের খড়া তাপে দিন-রাত অতিবাহিত হচ্ছে দুর্বিসহতার মধ্যে। শিশু এবং বয়স্ক মানুষ পড়েছে বেশি বিপদে।
মোঃ সাকিব হোসেন বলেন , সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার এই নমুনা। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে, সেখানে গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর দরকার কী ছিল?
লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন, গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ
ঘন ঘন লোড-শেডিং আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, আকাশে মেঘ আর বিজলি চমকালেই শ্যামনগরে বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পায় না।
শ্যামনগর পল্লী বিদ্যুৎ এর – জেনারেল ম্যানেজারের ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post