Print Date & Time : 23 August 2025 Saturday 9:36 pm

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের উপচেপড়া ভীড়

আবু সাঈদ গাজীপুর সংবাদদাতা : উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

শিল্প অধ্যুষিত এ উপজেলায় প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের বসবাস। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১২ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু জনবল সৃষ্টি না হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল সাধারন রোগীরা। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডঃ প্রণয় ভূষণ দাস যোগদানের পরে তিনি অতি দ্রুত জনবল সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। যার ফলশ্রুতিতে প্রায় ৯ বছর পর ৫০ শয্যার জনবল সৃষ্টি হয়। ফলে পাল্টে গিয়েছে চিকিৎসা সেবার মান। বর্তমানে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হয়।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহি: বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইন।

হাসপাতালে সেবা নিতে আশা রোগী আব্দুল্লাহ বলেন সকাল থেকে তার কোমর ব্যথা। এখানে অর্থোপেডিক্স ডাক্তার দেখাতে আসছি। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ অর্থোপেডিক্স ডাক্তার থাকায় আমার চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে যেতে হলো না। আগে যখন এই হাসপাতালে অর্থোপেডিক্স ডাক্তার ছিল না তখন আমি আমার ব্যথার জন্য ময়মনসিংহ গিয়ে অর্থোপেডিক্স ডাক্তার দেখাতে হতো। এখানে ডাক্তার থাকায় আমার সময় ও টাকা দুইটাই বেঁচে গেছে। এখানে ডাক্তাররা খুব ভালো সেবা দিয়ে থাকেন। রহিমা আক্তার নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার কানের সমস্যা। এখানে এসে তিনি নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ কে দেখিয়েছেন। এখন তার সমস্যা উন্নতি হয়েছে। তাই তিনি আবারো ডাক্তার দেখাতে এসেছেন।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মহসিন মৃধা বলেন প্রতিদিন কানের সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী আমাদের এখানে আসেন আমরা চেষ্টা করি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য। এভাবে প্রতিটি বিভাগের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য বহির্বিভাগে রোগীরা ভীড় করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায, গত জুন ২০২৪ হেলথ সিস্টেম স্কোরে গাজীপুর জেলার প্রথম স্থানে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । গত জুন মাসে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১৬৯ জন রোগী ,কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮৭৪৮ জন রোগী, কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬৯২ জন রোগী, কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫১৪ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় গত জুন মাসে সবচেয়ে বেশি রোগীর ছিল। হাসপাতাল টি ৫০ থেকে ১০০ শয্যা উন্নীত করার প্রয়োজন বলে মনে করেন উপজেলাবাসী।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডঃ প্রণয় ভূষণ দাস যোগদানের পর থেকে ওই হাসপাতালটিতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি একটি নান্দনিক মডেল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্স রূপান্তরিত হয়েছে। ইতিমধ্যে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি মডেল শিশু ওয়ার্ড, ডে কেয়ার সেন্টার, বাচ্চাদের খেলাধুলা করার জন্য প্লে জোন, একটি সুসজ্জিত আইসি আই কর্নার স্থাপন করা হয়েছে, রয়েছে বেস্ট ফিডিং কর্নার, এবং এনসিডি কর্নার, আই ভিশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। যা এই উপজেলার চক্ষু রোগীদের জন্য নতুন মাইল ফলক।

এছাড়াও এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ ছিল। বর্তমানে চালু করা হয়েছে। কয়েক বছর আগেও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট ছিল। নতুন মেশিন এনে আল্ট্রাসনোগ্রাম চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটি এক সময় ছিল ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত। এইচইডি মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে হাসপাতালটিকে। পুরো হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরায় আওতাভুক্ত করা হয়েছে। রোগীদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্যাথলজি বিভাগে নতুন কয়েকটি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে যা আগে ছিল না। ওই হাসপাতালে ১২ বছর আগের একটি পুরাতন অ্যাম্বুলেন্স ছিল যা ১২ বছর পর নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স আনা হয় ড্রাইভার না থাকলে ও গত তিন বছর যাবত স্থানীয়ভাবে অ্যাম্বুলেন্সচালানো হচ্ছে। এ হাসপাতালেঅ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য একজন ডাইভারের প্রয়োজন রয়েছে।
সিজার অপারেশন চালু থাকলেও সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। পর্যাপ্ত ঔষধ ও কেমিক্যাল এক্সরে মেশিনের ফিলিম না থাকায় রোগীদের চাহিদা মত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ।

তিনি আরো জানান, হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, গাজীপুর ৩ আসনের সাংসদ ও প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি হাসপাতালের সমস্যা গুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন। এই ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/