মুহুর্তে মুহুর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন শ্রমিকরা। শ্রমিক ইউনিয়ন ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন সাধারণ শ্রমিকরা। নেতাদের উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের ভাষ্য- “উস্কি দিয়ে পুস্কি গেলো”শ্রীমঙ্গলে নেতাদের গনধোলাই দিলো সাধারণ শ্রমিকরা
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলনে মুহুর্তে মুহুর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন সাধারণ শ্রকিরা। গত কয়েকদিনে প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন তারা। ফলে শ্রমিকনেতাদের সাথে সাধারণ শ্রমিকদের দুরত্ব বেড়ে গেছে। সমঝোতায় না গিয়ে এখন নিজেদের মধ্যেই কুন্দলে লিপ্ত হয়ে উঠেছেন শ্রমিকরা। গতকাল ২২ আগস্ট সোমবার সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট চা বাগানের শ্রমিকদেরকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়া কথা বলতে গেলে দুই শ্রমিকনেতার উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে গনধোলাই দেয় সাধারণ শ্রমিকরা।
জানা যায়, দেশব্যাপী চা বাগানসমূহের উদ্ভুত শ্রম অসন্তোষ নিরসনের জন্য প্রানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২১ আগস্ট রোববার রাতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে শ্রমিক নেতাকর্মীদের সাথে প্রশাসনিক একটি জরুরী বৈঠক আহ্বান করা হয়। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এর সভাপতিত্বে উক্ত বৈঠকে ৫টি শর্ত সাপেক্ষে উভয়পক্ষের স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্তা রেখে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং- বি ৭৭ তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ২২ আগস্ট হতে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মজুরি সম্পর্কীত শর্তে বলা হয়েছে আপাতত চলমান মজুরি অর্থাৎ দৈনিক ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে পরবর্তীতে মজুরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীরি সদয় বিবেচনার পর চুড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে মর্মে শ্রমিক নেতারা দাবি করেন। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আবেদন করেছেন যা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হবে। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিসমূহ প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত আকারে দাখিল করা হবে এবং বাগান মালিকগন বাগানের প্রচলিত প্রথা/দস্তুর মোতাবেক শ্রমিকদেরকে ধর্মঘটকালীন মজুরি পরিশোধ করবেন মর্মে উক্ত বিবৃতিটি স্বাক্ষরিত হয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে কোষাধ্যক্ষ পরেশ কালিন্দী, সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, পঞ্চায়েত কমল চন্দ্র বোনার্জি, মো. শহিদুল ইসলাম, নির্মল দাশ, কর্ণ তাঁতী এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ও শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম অধিদপ্তরের বিভিাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষর প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকালে শ্রমিক নেতারা বিভিন্ন বাগানে গিয়ে শ্রমিকদেরকে কাজে যোগদানের জন্য অনুরোধ করতে গেলে সাধারণ শ্রমিকরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এসময় বিভিন্ন স্থানে নেতাদের সাথে শ্রমিকদের বাক-বিতন্দা সহ হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
হঠাৎ করে নেতাদের সাথে শ্রমিকদের দুরত্ব দেখা দেওয়ার কারণ হিসেবে সাধারন চা শ্রমিকরা বলেন- “আমরা ৩০০ টাকার মজুরি দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি, কারো চামচামী করতে আসিনি। নেতারা তো মালিকের চামচামী করছে। নেতারা তো আমাদেরকে উস্কি দিয়ে পুস্কি গেলো। ১২০ টাকা মজুরিতেই যদি কাজ করতে হয়, তাহলে এতোদিন আন্দোলন করলাম কি কারণে।”
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ইতোপূর্বে গত ২০ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে আমরা প্রথমতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সাময়িক সময়ের জন্য ১৪৫ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেওয়া নিমিত্তে আমাদের পূর্বঘোষিত নির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির প্রত্যাহার করি এবং শ্রকিদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করি। একইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুণঃরায় চা শ্রমিকদের সাথে সাক্ষাৎ করে শ্রকিদের ন্যায্য মজুরি বিষয়ে পুণঃবিবেচনার বিষয়টি আলোচনায় রাখা হয়।
বৈঠক শেষে আন্দোলনরত সাধারণ শ্রমিকদের সাথে কথা হলে তারা আমাদের এই প্রস্তাব না মেনে বরং প্রধানমন্ত্রী যতক্ষন না পর্যন্ত শ্রমিকদের চুড়ান্ত মজুরি নির্ধারণ করে দিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যাবে উল্লেখ করে আন্দোলনে রত থাকেন তারা। সাধারণ শ্রমিকদের সাথে একমত পোষন করেই আমরা বিবৃতি প্রদান করেছি।
চা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনরত এক কর্মী মোহন রবিদাস বলেন- শ্রমিক নেতারা কোথা কি করেন আন্দোলনরত কর্মীদের সাথে কখনো কোন পরামর্শ করেন নি। আজকের এই উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য শ্রমিক নেতাদেরকে দায়ী করেন তিনি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ২২,২০২২//

Discussion about this post