দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্ন নেতা ফজলুল হক কবিরাজ গত ৫ বছর চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে নানা অপকর্ম, অনিয়ম ও দুর্নীর্তিসহ ইউনিয়নের মানুষের সাথে অসাদাচারণ করার কারণে জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় তার প্রতি সাধারণ ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যারফলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েও তার ভরাডুবি হয়েছে। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতার কার্ড করার নাম অর্থ বানিজ্য করার অভিযোগ এখন সবার মুখে। উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করলেও নৌকার প্রার্থী ফজলুল হক কবিরাজকে ভোটে বিজয়ী করা সম্ভব হয়নি।
নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবং ব্যক্তিগত রাজনীতির নাস্তানাবুদ অবস্থা বুঝতে পেরে পরাজিত প্রার্থী ফজলুল হক কবিরাজ নিজের অপকর্ম ও অযোগ্যতা ঢাকতে পরিকল্পিত ভাবে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ সহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। গতকাল রবিবার বিকেল ৪টায় ফিলিপনগর দারোগার মোড়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছেন ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হায়দার আলী উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ ও স্থানীয় অন্যান্য নেতাদেরকে নিয়ে সদ্যগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত প্রার্থী ফজলুল হক কবিরাজ। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পত্র কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও দেন তিনি। ফজলুল হক কবিরাজের অভিযোগে বলা হয় গেল ২৮ নভেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির নেতা নঈমুদ্দিন সেন্টু’র স্বজনদের কাছে থেকে টাকা ও ফ্ল্যাট নিয়ে ফজলু কবিরাজকে হারিয়েছেন এমপি ও ইউনিয়নের অন্যান্য নেতারা। যা শুধু মিথ্যাই না, মনগড়া ও ভিত্তিহীন।
সংবাদ সম্মেলনে ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী দৌলতপুর উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে সাথে নিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে পরাজিত ফজলুল হক কবিরাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। সংসদ সদস্যের (বাদশাহ’র) বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মনগড়া গল্প বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, বাদশাহ্ এমপি ২০১৭ সালে রিয়েল স্টেট কোম্পানি থেকে রাজধানীতে একটি ফ্ল্যাট কেনার চুক্তি করেন। ২০২০ সালে ফ্ল্যাটের টাকা পরিশোধ হলে পরবর্তীতে ২০২১ সালের মে মাসে ফ্ল্যাটটি নিবন্ধন করা হয়। এর আগে এমপি বাদশাহ্ ভাড়া করা বাসায় থেকে তার আইনজীবী পেশার কাজ করে আসছিলেন। গত আড়াই বছরের বেশি সময় তিনি স্বপরিবারে রাজধানীতে ওই বাসায় থাকেন। এমন বিষয় নিয়ে অবান্তর মিথ্যাচারের জন্য ফজলুর হক কবিরাজকে এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে নেতাদের নিয়ে মিথ্যাচার করায় দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কারণে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টু বর্তমানে আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী, ফিলিপনগর এলাকার আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করলেও দীর্ঘদিন ধরে সেন্টু দলের জন্য কাজ করে আসছেন। এবারের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র ভোট করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার আদেশ দেয়া হয়েছে। এতকিছুর পরেও তার বিরুদ্ধে বিএনপি তকমা লাগিয়ে নিজে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এমপি, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শরীফ উদ্দিন রিমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল আসকার হাসুসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার ফিলিপনগর ইউনিয়নে বসবাস। সেক্ষেত্রে ফজলুল হকের নৌকার পরাজয়ে এইসব নেতাদের দোষারোপ হাস্যকর বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়, একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ফজলুল হককে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে চাইছে। নৌকার পরাজিত প্রার্থী ফজলুল হকের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া নেতৃবৃন্দ বলেন, সর্বনাশী খেলা বন্ধ করুন।
ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এবারের নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান ফজলুল হক কবিরাজের সাম্প্রতিক অসংলগ্ন কথাবার্তার অভিযোগ এনে গতকাল বিকালে ফিলিপনগর দারোগার মোড়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ফিলিপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এসময় দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমন, সরদার আতিয়ার রহমান আতিক, আ’লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান মাষ্টার, প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন, মনি সরকার, যুবলীগ নেতা ওয়াসিম কবিরাজসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এবারের ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। বিজয়ী হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদেরমধ্যে ৯ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

Discussion about this post