হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ হাটহাজারীতে সওজের কোটি কোটি টাকার সরকারি মূল্যবান সম্পদ বেদখল হয়ে যাবার পেছনে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।
রাস্তার পাশের জলাশয় সরকারী সম্পদ দখলে নিতে ভরাট উপাদান ফেলার সুবিধার্তে চারিয়া এলাকায় সড়কের পাশে রোপন করা চারা গাছ কেটে ফেলার মত ঘটনাও ঘটেছে।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি সম্পদ দখলের মহোৎসব চললেও রহস্যজনক কারনে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সরকারি সম্পদ রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহন না করায় স্থানীয় সচেতন মহল যথাযত কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ভূমিদস্যু চক্রকে সহযোগীতার অভিযোগ তুলেছেন।
জানা যায়, গত প্রায় বছর ধরে (গত জানুয়ারী মাস থেকে) উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া মহিলা মাদ্রাসার উত্তর পাশে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব পাশের সওজের জায়গা দখলে নিতে পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্র ছায়ায় স্থানীয় আতাউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ড্রাম ট্রাক যোগে ভরাট কাজ শুরু করে। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হলে কয়েকমাস প্রকাশ্যে কাজ করা বন্ধ রাখলেও রাতের আঁধারে অল্প অল্প করে মাটি বালি ও ইটের খোয়া ফেলতে থাকে দখলকারী।
এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল সওজ কর্তৃপক্ষসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও সংশ্লিষ্ট কেউই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কোনো সুফল বা সরকারি সম্পদ রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ৫ অগাস্টের পরও সেই আতাউল্লাহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এখনো ঘাপটি মেরে বসে থাকা বিগত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্থ অসাধু কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায়র মধ্যে রাস্তার ধারে সরকারি জায়গায় লাগানো গাছের চারা রাতের আঁধারে কেটে ২০/৩০ ফুটের মত মুখও তৈরি করে নেয় যাতে সহজে ড্রাম ট্রাক থেকে মাটি/বালি ফেলা যায়।
উল্লেখিত স্থান ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দাপটের সাথে রাতে দিনে ড্রাম ট্রাক যোগে মাটি বালি ফেলে সরকারি সম্পদ দখল করছে এ তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানালেও অজ্ঞাত কারনে তারা নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না কার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিরা জানান, কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এসব সরকারী সম্পদ ভুমিদস্যুদের দখল করতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা । যার কারনে এসব অবৈধ কাজের তথ্য জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরকারি সম্পদ রক্ষায় বা দখলরোধে উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।
অন্যদিকে নাজিরহাট গণকবরের পশ্চিম পাশের পানি চলাচলের পথ জলাশয় ভরাট করে ফেলেছে ওই এলাকার টিপু নামের এক ব্যক্তি।
সরকারী জায়গা দখলকারী স্থানীয় আতাউল্লাহ ও উপজেলার নাজিরহাট কলেজ রোড়ের গণকবরের পশ্চিম পাশের জলাশয় ভরাটকারী টিপুর কাছে জানতে চাইলে তারা সওজের জায়গা ও জলাশয় ভরাট করার কথা স্বীকার করেন এবং আতাউল্লাহ আরো জানান, সওজের সাথে কথা বলে ম্যানেজ করেই ভরাট করছি। আর ভরাট করে এখানে কৃষি কাজ করব। গাছের চারা কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে, ওখানে কোনো গাছ ছিলো না বলেও জানান তিনি। এক পর্যায়ে আতাউল্লাহ বিকালে বা সন্ধ্যার দিকে তার সাথে দেখা করতে বলেন।
এ বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু আহসান মো.আজিজুল মোস্তফাকে বিষয়টি জানালে তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানালেও ২ দিন পরও সমানতালে ভরাট কাজ অব্যাহত থাকায় বিষয়টি জানিয়ে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা পুনরায় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, “ঘটনাস্থলে তিনি লোক পাঠিয়েছিলেন। ছবি তুলেছেন ভিডিও করেছেন।” তিনি আরো জানান, তিনার কাছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নাই। সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে দপ্তরে গিয়েও হাটহাজারীতে কারো কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
সড়কের পাশের চারা গাছ কাটার বিষয়ে হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, জায়গা যেহেতু সওজের তাই এ ব্যাপারে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
বিষয়টি সম্পর্কে সওজ চট্টগ্রাম জেলার প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। আমি এ ব্যাপারে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তখন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান জানান, যেহেতু সম্পদগুলো (সওজ) সড়ক ও জনপদ বিভাগের সেহেতু তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সাহায্য চাইলে আমরা সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি। সওজ কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে সহযোগিতা চেয়েও না পাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত ওই সম্পদের বিষয়ে সওজের কেউ আমার কাছে সাহায্য দূরে থাক ফোনে যোগাযোগও করেননি।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post