শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: সরকারি করিম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের এক একর ২২ শতাংশ জমি সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পরিবারের ভোগ দখলে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
লালমনিরহাট – বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে কলেজের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি সরকারকে লিখে দেয়া হয়নি। এ ঘটনাটি জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজ ও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কলেজটি সরকারি হওয়ার সময় ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল ডিড অফ গিফটটের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ৫ একর ৩৬ শতাংশ জমি সরকারকে( শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ) দলিল করে দেয়া হয়। যার দলিল নম্বর – ২৩৬১ । কিন্তু রহস্যজনক কারণে কলেজের পৃথক একটি প্লটের এক একর ২২ শতাংশ জমি সরকারকে লিখে দেয়া হয়নি। কলেজের সেই জমি বাদ রেখে ডিড অফ গিফট করা হয়েছে।
সেই জমি সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পরিবারের অবৈধ দখলে রেখেছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে শিক্ষা বিকাশে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতি মৌজায় করিম উদ্দিন পাবলিক মহা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সময় স্থানীয় মানুসের উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য ৫ একর ৩৬ শতাংশ জমি কেনা হয়। তিন বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চলার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। সেই সময় সদ্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা কার্যক্রম ঝুঁতিতে পড়ে। একশ্রেণির মানুষের মাঝে রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্থান পরিবর্তন হয়। একই প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় বার ১৯৭৫ সালের ২৮ অক্টোবর কাশিরাম মৌজায় এক একর ২২ শতাংশ জমি কেনে। যার দলিল নং ২৪০৬৫ । পুনরায় পৃথক দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে করিম উদ্দিন পাবলিক মহাবিদ্যালয়টি কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে কার্যক্রম মুখথুবরে পড়ে। সেখানে জমি ক্রয় পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। তাই পুনরায় ১৯৭৭-৭৮ শিক্ষা বর্ষে কলেজটি প্রথম ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। তারপর হতে করিম উদ্দিন পাবলিক মহাবিদ্যালয়টি অত্র উপজেলায় শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে চলছে।
২০১৭ সালে সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারি কলেজ করার ঘোষনা দেয়। এই ঘোষনার কারণে করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজটি সরকারি কলেজ হয়ে যায়। জাতীয়করণের শর্তে করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের ৫ একর ৩৬ শতাংশ জমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লিখে দিতে হয়। যাকে ডিড অফ গিফট বলে। এই ডিড অফ গিফট করার সময় সুকৌশলে ১৯৭৫ সালের ২৮ অক্টোবর কিনা এসএ দাগ নং ৪০৫৫ (১৬ শতক), এসএ দাগ নং ৪০৫৬ (৯৫ শতক) ও এসএ দাগ নং ৪০৫১ (১১ শতক)। যার মোট জমির পরিমাণ এক একক ২২ শতাংশ, যার দলিল নং ২৪০৬৫। এই এক একক ২২ শতাংশ করিম উদ্দিন পাবলিক মহাবিদ্যালয়ের জমি সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ডিড অফ গিফটটের মাধ্যমে দলিল করে দেয়া হয়নি। বর্তমানে এই জমিটি লালমনিরহাট- বুড়িমারী মহা সড়কের সাথে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার উপরে। বর্তমানে জমিটি সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের স্বজনেদের অধীনে রয়েছে। তারা ভোগ দখল করে খাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পরিবার কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমিটি আত্মসাৎ করার চেষ্টায় রয়েছে। যার কারণে সরকারকে ডিড অফ গিফট করে দেয়নি।
করিম উদ্দিন পাবলিক মহাবিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রংপুর জেলার কালীগঞ্জের কাশিরাম গ্রামের ইউনযস আলীর পুত্র নুরু জামান কলেজকে একশত ২২ শতাংশ জমি দাতা হিসেবে লিখে দেয়। সেই জমি কলেজ কতৃপক্ষ ১৯৯৮ সালের ২১ অক্টোবর কলেজের নামে খাজনা ও খারিজ করেছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কলেজটি জাতীয়করণের সময় ডিড অফ গিফটে এক একর ২২ শতাংশ কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পসটি লিখে দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ তৈয়বুর রহমান জানান, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে ২১ আগষ্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। কলেজের কি কি সম্পদ রয়েছে তাহা নির্ণয়ের জন্য ৭ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। তারা এই জমির বিষয়টিও খোঁজ খবর নিয়ে প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, সরকারি করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজটি সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রীর বাবার নামে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭ সালে এসে সরকারি হয়। কলেজটির জন্মলগ্ন হতে মন্ত্রীর ভাই অধ্যক্ষ ছিলেন। পরে মন্ত্রীর ভাইয়ের স্ত্রী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। কলেজে না গিয়েও মন্ত্রীর পুত্র এই কলেজের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে বছরের পর বছর বেতন নিয়েছে।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post