গোফরান পলাশ, কলাপাড়া: জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, মসজিদ ও কলেজের অর্থ সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি হয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার পর এবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বহিষ্কারের খড়গ সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুবুর রহমানের উপর।
ইতিমধ্যে দশ দিনের সময় দিয়ে তাকে কারন দর্শানো নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষ জনক না হলে শেষ পর্যন্ত দলের সকল পদ হারিয়ে বহিষ্কার হতে পারেন মাহবুব, এমন তথ্য জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সূত্র।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি মুঠোফোনে ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক রুমান হাসনাতকে শাসাতে গিয়ে দলের একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ মুহিববুর রহমানকে ‘রাতের ভোটের এমপি, আওয়ামী লীগ করতে হলে আমার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে করতে হবে- বলে উক্তি এবং ৬০ বছর ধরে আমিও আমার বাপে আওয়ামী লীগের সভাপতি, অন্যরা রাজাকার- বলে কটুক্তি’ কাল হলো তার।
এতে জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আব্দুল মান্নান ১১ এপ্রিল সরকারি রেজিস্ট্রি ডাক যোগে মাহবুবুর রহমানকে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে কেন তাকে বহিষ্কার করা হবে না মর্মে নোটিশ প্রেরণ করেন।
এছাড়া ১৫ই এপ্রিল শনিবার বিকেল তিনটায় কলাপাড়া দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামীলীগের এক জরুরী বৈঠকে সংগঠনকে বাঁচাতে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা রেজুলেশন আকারে জেলা ও দলের হাই কমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্র।
জানা যায়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত ও একবার আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মাহবুব। এরপর থেকে আলোচনায় আসেন তিনি। দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, অঢেল সম্পত্তি অর্জনের গুঞ্জন শোনা যায় তার নামে। এরপর ইসির হলফনামায় তথ্য গোপনে দুদক আইনে ঢাকার রমনা থানার মামলায় সস্ত্রীক আসামি হন তিনি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ঢাকা স্পেশাল জজ আদালত। ফের কলেজ ও মসজিদের কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগে পটুয়াখালী স্পেশাল জজ আদালতে দুদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে, যা দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা হাসিব তালুকদারের জিহ্বা কাটার হুমকি ও শ্রমিক লীগ নেতা রুমান হাসনাতকে মুঠো ফোনে শাসাতে গিয়ে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অসৌজন্যমূলক কথোপকথন ফেসবুক ছড়িয়ে ভাইরাল হন তিনি, যা নজরে আসে দলের উচ্চ পর্যায়ের।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, দল বিরোধী মন্তব্য করায় সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমানকে শোকজ করা হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে। কারণ ব্যক্তির চেয়ে দল বড়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান বলেন, মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের কেন্দ্রে চিঠি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব তালুকদার বলেন, শূন্য থেকে এমপি, মন্ত্রী হয়েছেন মাহবুব। দলের খেয়ে, দলের পড়ে আজ তিনি দলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে তিনি কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মাহবুবের দীর্ঘদিনের সারথী এসএম রাকিবুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, মাহবুব-নিজ দল সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা আত্মঘাতীর শামিল। তার এই মন্তব্যে আমরা বিব্রত ও বিস্মিত। বিষয়টি সত্যি হলে অবশ্যই তিনি ভুল করেছেন। একথা বলা মানে বিএনপির চরম মিথ্যাচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। আমি মনে করি এর তদন্ত হওয়া দরকার।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post