আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক: সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের জুলুম আর এক নায়কতন্ত্র শাসনের শুরু হয় ১৯৭০ সালে হাফেজ আল-আসাদের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে।২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীন হয় বাশার আল আসাদ।
রাজপুত্র থেকে হয়ে যায় চরম সৈরাশাসক।২০১১সালে আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হলে বিরোধী মতের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখে। কিন্তু ইসলামী মতাদর্শ জিলানী বিদ্রোহীদের তীব্র আক্রমণে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আল জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএন।
একজন সিরিয়ান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তাদের কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসন শেষ হয়েছে। বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, দামেস্ক এখন ‘আসাদ মুক্ত’। তারা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে, যেখানে সেনার কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি। শহরের সেডনায়া এলাকায় একটি বড় কারাগার থেকে বহু বন্দিকে মুক্ত করেছে তারা।
বিদ্রোহীরা ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা সিরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হোমস শহরও দখল করেছে। শহরটি দখলের পর বিদ্রোহীরা উদযাপন করেছে।মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বলেছেন, এর মাধ্যমে ১৯৭০-এর দশকে শুরু হওয়া আসাদের পরিবারের ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।এই পরিস্থিতি একাধিক কারণের ফল। আসাদের মিত্র ইরান ও রাশিয়া বৈশ্বিক ঘটনাবলীর চাপে দুর্বল ও মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, এবং অনেকেই উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসনের শুরু হয় ১৯৭০ সালে হাফেজ আল-আসাদের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। ৫৪ বছর ধরে এই পরিবার দেশটির রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। তাদের শাসনামল চিহ্নিত হয়েছে গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য।হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭০ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সিরিয়ার বাথ পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং সামরিক বাহিনীতে তার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। তার শাসন ছিল কেন্দ্রীয়করণ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রতীক।
১৯৮২ সালে হামা শহরে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিদ্রোহ দমনে তার আদেশে যে গণহত্যা চালানো হয়, তাতে ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনা তার শাসনের এক কালো অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে লেখা রয়েছে।
২০০০ সালে হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর তার পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন। পেশায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বাশারকে প্রথমে একজন সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দেখা হলেও, ক্ষমতায় আসার পর তিনি তার পিতার মতোই কঠোর নীতি অনুসরণ করেন।২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে, যা আসাদের শাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে আনন্দ-উল্লাস করছে সাধারণ মানুষ। এদিকে দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সামরিক বাহিনীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানি।
আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান উদযাপনে গুলি চালানোও নিষিদ্ধ করেছেন এইচটিএস প্রধান। দামেস্কের পথে পথে হাজার মানুষকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। অপরদিকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় কারাগার সেদনায়া থেকে হাজার হাজার বন্দিকে মুক্ত করেছে বিদ্রোহীরা। আসাদ সরকারের নিপীড়নের শিকার শত শত মানুষ যারা কারাবন্দি ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন তারা এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন।

Discussion about this post