এস এ শফি, সিলেট : সিলেটে গতকাল থেকে বৃষ্টি না হলে নগরীর জলাবদ্ধতা কমেনি। এ জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষকরে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভোগছেন নগরবাসী। এদিকে উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট মহানগর, সদর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলাসহ অন্যান্যা উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে, নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসন।
সিলেট নগরীর উপশহর, তের রতন, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, কাজিরবাজার এলাকায় পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার জনসাধারণকে দূরবর্তী এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
নগরীর উপশহর মেন্দীবাগ এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বন্যার কারনে আমাদের এলাকার বেশির ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে খাবার পানি নিয়ে আমাদের সংকট পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘সিসিকের পানির লাইন অনেক এলাকায় ডুবে থাকায় পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে গতকাল শনিবার থেকে আমরা জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর মানুষের মাঝে শুকনা খাবারের পাশাপাশি দুই লিটার করে পানি সরবরাহ শুরু করেছি।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে পারে। এতে ধীরগতিতে হলেও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকালে সিলেট জেলার দুটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল। সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৪ সেন্টিমিটার ও বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।বিকেলে জেলার নদ-নদীর পানি আরো খানিকটা কমেছে। বিকেল ৩টায় কুশিয়ারার পানি অমলসীদে ১৮৯ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা নদীর পানিও কমে বিকেলে কানাইঘাট পয়েন্টে ৮২ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ছয় সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
জেলার গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি এখনো থাকলেও তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ সুরমা ও বিয়ানীবাজারে নদীর পানি নেমে গেছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৭ থেকে ২৯ মে তিন দিন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। ৩০ মে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। এর পর থেকে বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে। তবে বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা ধীরগতিতে কমছে। আশা করছি, বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকেই যাবে।’
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেট সিটি করপোরেশনের নয়টি ওয়ার্ড, ছাড়াও সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন, কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, জকিগঞ্জ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের নয়টি ওয়ার্ডসহ জেলার বন্যা কবলিত আটটি উপজেলার মোট ৬৮টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের ৭৮১টি গ্রাম বন্যা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে৬ লাখ ৯ হাজার ৩৩ জন।
বন্যা দুর্গতদের জন্য পুরো জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৩৪২ জন মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, এ যাবত বন্যা আক্রান্ত মানুষের জন্য ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১২৫০ বস্তা শুকনা খাবার ৯ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৯ লাখ টাকার গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বেশি দুর্গত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে দুই দফায় ৪০ টন করে চাল ও দেড় লাখ টাকা করে এবং ২০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত আরো ৮টি উপজেলায় ২৫ মেট্রিক টন করে চাল, এক লাখ টাকা এবং ৫০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট মহানগর, সদর উপজেলা, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য,২ জুন ২০২৪

Discussion about this post