এস এ শফি, সিলেট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছেন নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় নতুন পুরাতন মিলে জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক মাঠে রয়েছেন। ইতিমধ্যে অনেকে আনুষ্ঠানিরকভাবে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন, আবার অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে সরগরম রেখেছেন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীরা দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নতুন প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানারকম প্রতিশ্রুতি আর পুরাতনরা তাদের উন্নয়নের কর্মকান্ড ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন।
এদিকে, অবাধ সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষে জেলা নির্বাচন অফিস ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের তিন বারের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। এবার তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। এ উপজেলায় অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, নুরে আলম সিরাজী, ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বনাথ উপজেলার সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন; বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া, আলতাব হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, প্রবাসী মোহাম্মদ আলী মজনু, চেরাগ আলী, সামসাদুর রহমান রাহীম, জেলা পরিষদ সদস্য এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মহবুব মিয়া, চেয়ারম্যান আরশ আলী গনি, কাউন্সিলর ফজর আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ চৌধুরী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সেবুল মিয়া, স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নাল আহমদ মিয়া, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল ওয়াদুদ।
ফেঞ্চুগঞ্জের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- শাহ মুজিবুর রহমান জকন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুর রহমান নোমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, জাহিদুল ইসলাম মুরাদ।
দক্ষিন সুরমা উপজেলায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ এখন ও নির্বাচনী মাঠে নেই। তার অনুপস্থিতিতে এখন পর্যন্ত উপজেলা জুড়ে প্রচার, প্রসার ও জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ। তিনি দীর্ঘ দিন যাবত পুরো উপজেলার সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। এ ছাড়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আহমদ, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বদরুল ইসলাম, মোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম শাইস্তা, সাবেক চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম, সিলেট জেলা সিএনজি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ দিলওয়ার,যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক লাল আওয়ামী লীগ থেকে এবার এই উপজেলায় প্রার্থী হতে চাইছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা লোকমান আহমদ এর সাথে জামায়াতের খায়রুল আফিয়ান চৌধুরী ও প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গোলাপগঞ্জের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী, লুৎফুর রহমান, প্রবাসী আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল ও ভাইস চেয়ারম্যান নাজিরা বেগম শিলা। বিয়ানীবাজারের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, আতাউর রহমান খান, মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন, জাকির হোসেন, আব্দুল বারী ও সাইফুল ইসলাম নীপু। জকিগঞ্জের বর্তমান চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ চৌধুরী এবারো প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। মাঠে সক্রিয় আছেন- সাইফুদ্দিন খালেদ, শাহীন আহমদ, শামীম আহমদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী জাবেদ, বর্তমান মেয়র আব্দুল আহাদ, মাওলানা মুফতি আবুল হাসান। কানাইঘাটের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ পলাশ, শামসুজ্জামান বাহার, আবুল খয়ের, লোকমান হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক আব্দুর রহিম, ফয়জুল্লাহ বাহার, শাহাবউদ্দিন প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভোটাররা।
জৈন্তাপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, এম লিয়াকত আলী, প্রবাসী আব্দুল গফ্ফার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তোফায়েল, এবিএম জাকারিয়া, বর্তমান চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম বাহার, প্রবাসী নেতা জামাল আবু নাসের, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন।
গোয়াইনঘাটের বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, প্রবাসী গোলাপ মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হক, ফারুক আহমদ, শাহাবউদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া রাসেল, সুভাস দাস প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোম্পানীগঞ্জের প্রার্থী হতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন দুই বারের চেয়ারম্যান শামীম আহমদ, মজির উদ্দিন, আলী আমজদ, আব্দুল ওয়াদুদ আলফু চেয়ারম্যান, আপ্তাব আলী কালা মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, মুক্তার হোসেন ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া।
সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের একাধিকবারের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ আলাপকালে বলেন , স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক না থাকা-ই ভালো। প্রতীক না থাকলে নির্বাচনে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়বে। প্রার্থীও বেশি। আবার প্রার্থী পছন্দের হওয়ার পরও অনেকে প্রতীকের কারণে ভোট দিতে পারেন না। ফলে এবার আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি সবার জন্য ভালো।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান আহমদ চৌধুরীর মতে, স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক থাকলে জাতীয় নির্বাচন অর্থবহ হয় না। সুতরাং স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে প্রতীক না থাকা-ই ভালো।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ বলেন, জনগণও প্রতীক চায় না। প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হলে দলমত নির্বিশেষে ভোটাররা এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। এতে করে প্রার্থীদের নিজেদের শক্তিমত্তারও প্রমাণ পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া; প্রশাসনও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানান তিনি।
সিলেট বিভাগের ৩৯টি উপজেলায় ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ৫টি ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রথম ৪টি ধাপের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। পঞ্চম ধাপের তারিখ পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে। ৪ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের ৮টি, সুনামগঞ্জের ১১ টি, মৌ’বাজারের ৭টি এবং সিলেটের ১৩টি। ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য জানায়।
তবে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় পরবর্তীতে নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে ইসি। এই ২ উপজেলায় কোনও তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। বাকি উপজেলাগুলোতে ৪ মে থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে ২৫ মে ৪র্থ ধাপে ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে নির্বাচন।
ইসির দেয়া তালিকা অনুযায়ী ১ম ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৪ মে। এদিন সিলেটের সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। একই তারিখে ভোট হবে সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায়। এছাড়া মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখায় এবং হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় একইদিনে ভোটগ্রহণ হবে।
২য় ধাপে ভোটগ্রহণ হবে ১১ মে। এদিন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে নির্বাচন হবে। একই তারিখে ভোট হবে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জে। এছাড়া মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর এবং হবিগঞ্জের বাহুবল, চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জ উপজেলায় একই দিনে ভোট হবে।
৩য় ধাপে ভোট হবে ১৮ মে। এদিন বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় নির্বাচন হবে। একই তারিখে ভোটগ্রহণ হবে সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এবং হবিগঞ্জ সদর, লাখাই, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জে একই দিনে ভোটগ্রহণ হবে।
৪র্থ অর্থাৎ শেষ ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। ওইদিন সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই তারিখে ভোটগ্রহণ হবে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ ও মধ্যনগরে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

Discussion about this post