সিলেট অফিস : সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার খলাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ে তদন্তপূর্বক প্রত্যাহার ও শাস্তি প্রদানের দাবিতে সিলেট বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন খলাগ্রামবাসী।
বুধবার (২০ অক্টোবর) সকালে পৃথক স্মারকলিপি প্রদানের সময় খলাগ্রামের মুরুব্বিয়ান ও যুবসমাজ এবং খলাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে খলাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগমের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা তুলে ধরেন গ্রামবাসী। স্মারকলিপিতে বলা হয়- খলাগ্রাম স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগমের দুর্নীতি, স্লিপের টাকা আত্মসাত, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের ব্যাপারে ৪০ জন গ্রামবাসীর স্বাক্ষরসম্বলিত একটি অভিযোগ গত ১৬ অক্টোবর বিয়ানীবাজার উপজেলা শিক্ষা অফিস, ২০ অক্টোবর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও ২৪ অক্টোবর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবেের অভিযোগ করেও কোন সুরাহা হয় নি। উল্টো দুর্নীতিবাজ রহিমা বেগম ও তার সন্ত্রাসী ভাইদের দৌরাত্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। তারা বর্তমানে রাজনৈতিক মামলা, হামলা ও নানা ধরনের নির্যাতন করছে অভিযোগকারী গ্রামবাসীদের উপর।
স্মারকলিপিতে বিয়ানীবাজার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার পারভেজ আহমদের সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগমের যোগসাশেসের বিষয় তুলে ধরে বলা হয়- গত ২৯ অক্টোবর বিয়ানীবাজার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার পারভেজ আহমদ তদন্ত করতে স্কুলে আসলেও রহিমা বেগমের সাথে পূর্বের ঘনিষ্ট ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকার কারনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দুর্নীতি ও গাফলতি নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ আমলে না নিয়ে রহিমা বেগমকে নির্দোষ হিসেবে উপস্থাপন করে ৮ নভেম্বর জেলা শিক্ষা অফিসে রিপোর্ট প্রদান করেন।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার পারভেজ আহমদ বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে স্কুলের অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা- শিক্ষক ও অভিভাবদের সাথে দুর্বব্যবহার, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, রহিমা বেগমের অনিয়মের প্রতিবাদকারীদের হুমকি, বিদ্যালয়ে বসে নিজের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড ও হিসাব-নিকাশ, স্লিপ কমিটির সাথে আলোচনা না করে খামখেয়ালিমতো টাকা খরচসহ রহিমা বেগমের নানা অপকর্মের বিষয় তুলে ধরেন। এমনকি পরিদর্শনের আগের দিন অর্থ্যাৎ ২৮ অক্টোবর স্লিপ কমিটির হিসাব আপডেট করে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নেয়ার বিষয় পারভেজ আহমদের কাছে স্বীকার করেন স্লিপ কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। এতকিছুর পরও পারভেজ আহমদ কেবলমাত্র পূর্ব থেকে রহিমা বেগমের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকার কারনে গ্রামীবাসীর অভিযোগ ও স্বাক্ষ্য আমলে না নিয়ে রহিমা বেগমের পক্ষে রিপোর্ট দেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগমের মামলাবাজির তথ্য তুলে ধরে বলা হয়- গ্রামবাসীর পক্ষে অভিযোগ করায় রহিমা বেগম তার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি গোলাপগঞ্জের ফুলসাইন্দের বাসিন্দা মাছুম আহমদের দায়েরকৃত মামলায় (যার নং- কোতোয়ালি জি.আর. ২১/৫০২, তারিখ ১৩/১১/২৪ইং) খলাগ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার বদরুল হককে রাজনৈতিক বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২২ নম্বর আসামী করা হয়। মামলার বাদি মাছুম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগমের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে আনসার কমান্ডার বদরুলকে মামলায় জড়িয়েছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক ফোনকল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
এতো অপকর্ম করেও খলাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহাল থাকায় ও তার শাস্তি না হওয়ায় স্মারকলিপিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন গ্রামবাসী। রহিমা বেগমের সন্ত্রাসী ভাই ও তাদের বাহিনীর সাথে যেকোন সময় অপ্রীতিকর ও রক্তময়ী সংঘর্ষ ঘটে যেতে পারেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় স্মারকলিপিতে।
স্মারকলিপিতে অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগমকে প্রত্যাহার করে এলাকায় শান্তি ও স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানান গ্রামবাসী ও স্কুলের অভিভাবকরা।

Discussion about this post