Print Date & Time : 14 March 2025 Friday 6:24 pm

সিলেটে মামলা বানিজ্যে: দলীয় নেতাকর্মীও বাদ যায়নি

সিলেট অফিস: সিলেটে দায়ের করা মামলা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এসব মামলায় অনেক নির্দোষ ব্যক্তিদেরও আসামি করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না সাংবাদিকরা। এমনকি বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ব্যক্তি আক্রোশের কারণে মামলায় আসামি করা হচ্ছে।

মামলার অভিযোগ উঠেছে, মামলা দায়ের নিয়ে বাণিজ্যেও নেমেছে কেউ কেউ। ফলে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন সিলেট বিএনপি’র নেতারা। তারা জানিয়েছেন,  কেউ আক্রান্ত হলে মামলা দিতে পারেন। কিন্তু এই মামলা নিয়ে বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ নিলে কোনো বিতর্ক থাকবে না। এ কারণে মামলা দায়েরকারী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের নিজ নিজ ইউনিটের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন পর্যন্ত সিলেটে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ১৮ জন নিহত ছাড়াও আহত হয়েছে হাজারো নেতাকর্মী। অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। এখন সুস্থ হয়ে এসে মামলা দায়ের করছেন। 

আদালত সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে জেলা ও নগর মিলিয়ে ২০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে চ্যানেল আই ও রেডিও টুডে’র  সিলেট প্রতিনিধি সাদিকুর রহমান সাকীকে। বৃহস্পতিবার সিলেটের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি। 

নগরের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক জানিয়েছেন, এ মামলা দায়েরে ওয়ার্ড বিএনপি’র কেউ সম্পৃক্ত নন। আমরা মামলা সম্পর্কে জানি না। মামলার বাদীকে আমি চিনি না। ২০শে আগস্ট সিলেট জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ৫নং ওয়ার্ডের যুবদলকর্মী রেদোয়ান আহমদকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় তার বড় ভাই আলমাছ আহমদ শুকুরকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও দু’টি মামলায় আলমাছ আহমদ শুকুরকে আসামি করা হয়। 

যুবদল কর্মী রেদোয়ান আহমদ বলেন, তার ভাই শুকুর বিগত ২০১৮ সালে দায়ের করা আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক মামলায় আসামি হয়েছিলেন। অথচ এবার তাকে বিএনপি’র মামলার আসামি করা হলো। আর আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখলেও কেবল মাত্র ব্যক্তি আক্রোশে তার ওপর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন- তার এক ভাই ওয়ার্ড বিএনপি’র ক্রীড়া সম্পাদক আর পিতা আব্দুস সামাদ ছিলেন বিউবো’র শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক। তাদের গোটা পরিবার বিএনপি ঘরানার হওয়ার পরও তারা এখন আসামি। 

স্থানীয় যুবদল নেতা রায়হান আহমদ বলেন, রেদোয়ান যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সে বিগত আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল। এছাড়া তার ভাই শুকুর অতীতে আওয়ামী লীগের দায়ের করা দু’টি মামলায় আমাদের সঙ্গে আসামি ছিলন। তাদের পরিবার বিএনপি পরিবার। ব্যক্তি আক্রোশের কারণে তাদের ওপর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি। নগরীর টুকেরবাজারের একটি মামলায় সাংবাদিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব অলিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

এ ব্যাপারে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, আন্দোলনে আহত হলে যে কারো মামলা দেওয়ার অধিকার আছে। তবে আমাদের নির্দেশনা হলো যারা প্রকৃত আসামি এবং সন্ত্রাসী তাদেরকে যেন আসামি করা হয়। কোনো নির্দোষ, নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করলে দল থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি ইতিমধ্যে সিলেট বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা দলীয় নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন। 

এদিকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রেজিমের সময় আওয়ামী লীগ ও সরকারি বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা সমূহে কোনো নিরীহ কর্মকর্তা ও ব্যক্তিকে আসামি এবং হয়রানি না করার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। 

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেন- যারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো নির্দোষ ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানির শিকার না হন। সিলেট জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে কাউকে আসামি করা যাবে না। যদি এই ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তবে সিলেট জেলা বিএনপি সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//আগস্ট ২৮,২০২৪//