সিলেট অফিস : সিলেটে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে অক্টোবরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। সারাদেশের মতো সিলেটেও প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছেন যারা সবাই হাসপাতালে ভর্তি।
আগেরদিন ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা ছিল ৪ জন এবং এরআগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১২ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে ১৮ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এরমধ্যে ওসমানী মেডিকেলে ৫ জন এবং অন্যান্যরা বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধিন।
সিলেট নগরীতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় জনমনে বিরাজ করছে শঙ্কা। যদিও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এডিসের লার্ভা ধ্বংসে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবুও শতকরা ১০ ভাগ স্থানে এডিসের লার্ভা পাওয়াকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেনা স্বয়ং সিসিক।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে বুধবার নগরীতে অভিযান চালিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
এ সময় এডিস মশা ও লার্ভা পাওয়ায় পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বেলা ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। অভিযান পরিচালনা করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারিয়া সুলতানা।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১হাজার ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ১২১ জন। এ সময় নতুন করে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে মশাবাহিত রোগটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৭ জনে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৩৪ হাজার ১২১ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী। ১ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মৃত ১৭৭ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ।
অক্টোবরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ সেপ্টেম্বরের অবস্থাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। অক্টোবরে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি দেখেছে সারাদেশ। যেখানে আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিনগুণ। আগের আট মাসের সমান মৃত্যু ছিল এক মাসেই।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৯ মাসের মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেপ্টেম্বরে। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে ৮০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা ৯ মাসের মোট মৃত্যুর প্রায় ৫০ শতাংশ।
জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ১৬৩ জন। সরকারের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৩০ হাজার ৯শ ৩৮ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ১৩ হাজার ৫শ ৮ জন ও ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ১৭ হাজার ৪শ ৩০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ হাজার ৯শ ৩৮ জন। তাদের মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের হার ছিল ১৪ শতাংশ। মাসের শেষ সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ২৪ শতাংশ। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সেপ্টেম্বরের প্রথম ৭ দিনে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান ১১ জন। আর শেষ ৭ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩০ জন।
প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
গত বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন।
গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।
ডেঙ্গুর শঙ্কার বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হচ্ছে ঠিকই। তবে আক্রান্তের সকলেরই ট্রাভেল হিস্ট্রি রয়েছে। সে দিক থেকে বলা যাচ্ছে স্থানীয়ভাবে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেনা। তবুও বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, এডিসের প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংস করতে বাসা-বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এর আঙ্গিনা সমুহ সব সময় পরিস্কার রাখতে হবে। সকলে সচেতন হলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব।
হা/04/1024 dtbangla

Discussion about this post