সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মুদি দোকানের কর্মচারী সজল বিশ্বাস পটল (৩৮) হত্যা মামলায় আসামি শাকিল ও সুমনকে বয়স বিবেচনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী। মামলায় আসামিদের ২৮২ ধারায় ২বছর ও ৪৪৯ ধারায় ৫ বছরের কারাদণ্ডেরও আদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার ভোলারকান্দি গ্রামের মৃত দছির আলীর ছেলে শাকিল (২০) ও মিয়াধন মিয়ার ছেলে সুমন আহমেদ (২২)। এছাড়া মামলার অপর তিন আসামি হত্যারকাণ্ডের সময় আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশু হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে দোষীপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শিশু আদালতে (মামলা নং ১৫৭/২৩ ) তাদের বিচারিক কার্যক্রম বর্তমানে শুরুর পর্যায়ে রয়েছে।
জানা গেছে,আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত স্থানীয় তিন শিশু প্রায়ই ঋষিকেশ দে এর মুদি দোকানে আসত। ২০ বছর ধরে দোকানে কর্মচারী হিসেবে কর্মরত সজল বিশ্বাস পটলের কাছ থেকে শিশুরা বাকিতে জিনিসপত্র নিত। পূর্বের বাকির টাকা না দিয়ে নতুন করে বাকিতে মালামাল দেয়ার জন্য দোকান কর্মচারী সজলকে তারা চাপাচাপি করত। এ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের পূর্বে ভিক্টিম সজলের সাথে তাদের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে গত বছরের (২০২২ ইং) ২০ জুলাই রাতে স্থানীয় ৩ শিশুর সাথে ঐ এলাকায় বেড়াতে আসা আসামি শাকিল ও সুমনসহ সর্বমোট পাঁচজন যুক্ত হয়ে দোকানের সামনের কালভার্টে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে নিহত সজলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন নিহত সজল প্রতিদিনেরমত দোকান মালিকের বাড়ি থেকে রাতের খাবার শেষে দোকানে রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে ফেরত আসলে দোকানে ঢুকে ঘটনায় জড়িত ৪জন সজলের গলায় গামছা পেছিয়ে একে অপরের সহায়তায় শাষরোধ করে তাকে হত্যা করে।
এসময় দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৩হাজার ২শত ৩০ টাকা চুরি করে লাশ দোকানের ভেতর ফেলে যায়।
খবর পেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ভোর রাতে ঘিলাছড়া আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা থেকে শাকিল ও সুমনসহ ৪জনকে আটক করে। তাৎক্ষণিকই তারা স্থানীয়দের সামনে সজল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর এক শিশুকে আটক করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এক শিশুসহ ৩ জন বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন। এই মামলায় মোট ৩১ সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জন আদালতে তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. নিজাম উদ্দিন।