শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম: ৭ জানুয়ারি। সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর।
২০১১ সালর এই দিনে কুড়িগ্রামর ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-র গুলিতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয় ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মরদেহ। গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলাের তীব্র সমালােচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফ এর বিশেষ কোর্ট দুই দফায় বিচারিক রায় খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাখ্যান করা ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহযাগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকার্ট রীট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার।
এই হত্যা কান্ডের ১৪ বছরও সুষ্ঠু বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার। ফেলানীর বাবা-মায়ের অভিযােগ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই ফেলানির বিচার পাননি তারা। তবে নুতন সরকারের নিকট আর্ন্তজাতীক আদালতের মাধ্যেম সঠিক বিচার পাবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলানীটারী গ্রামের দরিদ্র নূরুল ইসলাম পটর তাগিদ আর দশজনের মতাে পারি জমান ভারতে। পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁয়ে এলাকায়। নূরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দ্যেশে নিজ দেশে আসতে ভারতের কাটাতার টপকে আসতে হবে তাদের । ৭ জানুয়ারি শুক্রবার। ভোর ৬টা ফুলবাড়ির অনর্ন্ত পুর সীমান্তে মই দিয়ে কাটাতার টপকায় ফেলানীর বাবা। পরে কাটাতার টপকানোর চেষ্টা করে ফেলানী। এসময় ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হয় ফেলানী। গুলি বিদ্ধ হয়ে আধাঘণ্টা ধরে ছটফট করে কাটাতারেই ঝুলন্ত অবস্হায় নির্মমভাব মৃত্যু হয় কিশারী ফেলানীর। এরপর সকাল পৌনে ৭টা পর্যন্ত নিথর দেহ কাটাতারে ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ঘণ্টা।
এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালর ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহার জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়।
বিএসএফ এর এ কাের্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টম্বর আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাক্ষান কর পুনঃবিচারের দাবী জানায় ফলানীর বাবা। ২০১৪ সালর ২২ সেপ্টম্বর পূনঃবিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালত স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পূণরায় আত্মস্বীকত আসামি অমিয় ঘােষক খালাস দেয়।
রায়ের পর একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফলানীর বাবার পক্ষ দেশটির সুপ্রীম কোর্ট রিট পিটিশন কর। ওই বছর ৬ অক্টােবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সাল কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরএ ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি এখনও। এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বগম।
ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, ফেলানী হত্যার ১৪ বছর হয়ে গেলো কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার পাই নাই। ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে বিচারটা নিয়া গেলাম, কয়েকবার শুনানির তারিখ দিলও তা পিছিয়ে গেছে । কয়েকদিন আগে শুনলাম শুনানি হবে। তবে কবে হবে এর কোন তারিখ পাইনি। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সরকারর কারণে ফেলানী হত্যার বিচার আটকে আছে। আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যাকারীর বিচার মরার আগে দেখে যেতে চাই। একই কথা জানান ফেলানীর মা জাহানারা বেগম। তিনি জানান অনেকবার মেয়ে হত্যার দাবি জানিয়ছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের বিপক্ষে লড়তে চেষ্টা করেনি। বর্তমান ইউনুছ সরকারের কাছে আÍর্জাতিক আদালতের মাধ্যেম মেয়ে হত্যার বিচার প্রার্থনা করেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি ফেলানী হত্যার বিচার হলে কমবে সীমান্ত হত্যা। তাই দ্রুত এই বিচারটা করা দরকার।
কুড়িগ্রাম জর্জ কোটের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের মহামান্য সুপ্রিমকার্ট হত্যা মামলার রীট তালিকাভূক্ত রয়েছে। সেটি যত দ্রুত শুনানি হবে ততই মামলাটির অগ্রগতি হবে এবং ফেলানী হত্যার বিচার হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকরাও সুরক্ষিত থাকবে।।

Discussion about this post