Print Date & Time : 26 August 2025 Tuesday 9:49 am

সুনামগঞ্জে শিক্ষিকার সম্মানহানী ঘটানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে আমেরিকান প্রবাসী নজরুল আহমেদ ও তার দেশীয় সহযোগীগণ কর্তৃক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল করত: অপপ্রচার এবং পর্ণোগ্রাফি প্রস্তুত ও ব্যঙ্গচিত্র দ্বারা সম্মানহানী ঘটানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগার লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের ‘তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের পুরান বারুংকা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় রাছিনগর মাহমুদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ভক্তভোগী তাহেরা আক্তার। 

বিদেশে অবস্থানরত একজন ডিপ্রেশন রোগী নজরুল আহমেদ ও তার দেশীয় সহযোগীগন কর্তৃক তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে ঐ শিক্ষিকা বলেন, মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার বাউরভাগ ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামের মৃত হাজী আব্দুস সোবাহানের পুত্র মোঃ নজরুল আহমেদ দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আমেরিকা প্রবাসে আছেন। প্রাইমারীতে ঐ শিক্ষিকার চাকুরী লাভের ৩ বছর পরে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে উক্ত ডিপ্রেশন রোগী নজরুল আহমেদ তার অজ্ঞাতসারে তার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাকে একতরফাভাবে প্রেম নিবেদন করতে থাকেন। আমেরিকা প্রবাসী পরিচয়ে উক্ত নজরুল ঐ শিক্ষিকার ছোট ভাইকে ইউরোপ পাঠানোর জন্য তাদের পরিবারবর্গকে প্রস্তাব দিয়ে পাসপোর্ট করান। ২০২০ সালে উক্ত নজরুলের কথা অনুযায়ী তার বন্ধু রাফাত চৌধুরী এবং তার বড় ভাবীর নিকট শিক্ষিকা ও তার পরিবারবর্গরা নগদ ৭ লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রবাসী নজরুল শিক্ষিকার ভাইকে বিদেশে নিতে পারেননি বলে মিথ্যে অজুহাতের দোহাই দিলে, তারা তাদের পাওনা টাকা বিভিন্ন কিস্তিতে শিক্ষিকার একাউন্ট নাম্বারে ফেরত আনেন।

ভূক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন,২০১৮ সালের জুন জুলাই মাসের দিকে নজরুল আহমেদ তার কোন এক বন্ধুর কাছ থেকে আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে আমার সাথে তিনি ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী করে এবং অবিবাহিত থাকাবস্থায় আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রæতি দেন। আমার সাথে ভিডিও কলে আলাপ করার সময় তিনি এসব গোপন আলাপন আমার অনুমতি ছাড়া কলরেকর্ড রাখেন এবং স্ক্রীনশর্ট সংরক্ষণ করেন। পরবর্তীতে এসব ছবি ভিডিও পাটিয়ে আমাকে ভয় দেখান যে তার তার কথামতো আমার ছবি ও ভিডিও তাকে না পাটালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি আমার সকল ছবি ও আলাপনের রেকর্ড ভাইরাল করে দেবেন। আত্ম সম্মানের ভয়ে আমি বাধ্য হয়ে তার অন্যায় নির্দেশ পালন করি।

তাহেরা আক্তার বলেন,ডিপ্রেশন রোগী নজরুল আহমেদ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল)  দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের পৌরবিপনীস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিডিও বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে আমার চরিত্র হনন করিয়া সমাজে আমাকে কলংকিত করার অসদুদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন এবং করান। এতে তিনি প্রচার দেন যে, আমি একজন নারী হয়ে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা,আইফোন,ল্যাফটপ,স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়েছি। বাস্তবে তাকে প্রলোভন দিয়ে আমি কোন কিছু নেইনি। বরং তিনি আমার ভাইকে বিদেশে নেওয়ার জন্য প্রতারনামূলকভাবে আমার পরিবারের কাছ থেকে যে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং আমার সম্মানহানী ঘটানো অব্যাহত রেখেছেন তার উপযুক্ত ক্ষতিপূরন আদায়ের জন্য আমার যা যা করার দরকার আমি তাই করে যাচ্ছি। 

কথিত সংবাদ সম্মেলনে উক্ত মানসিক রোগী তাহেরা আক্তারের ছোট বোনের বিয়ে ও চাকুরীর জন্য টাকা পাটিয়েছেন বলে অন্যায়ভাবে দাবীসহ গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে ঐ শিক্ষিকা বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমার বোনের চাকুরী হয়েছে তার মেধা ও যোগ্যতার বলে। এখানে কাউকে কোনপ্রকার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ কাল্পনিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।   

নজরুল আহমেদ গত ১৩ জানুয়ারি থেকে আমার গ্রামের কতিপয় লোক ও আত্মীয় স্বজনের এবং উপজেলার চেয়ারম্যান,শিক্ষা অফিসার,শিক্ষক ও ২/১ জন সাংবাদিকের কাছে মানহানিকর কথাবার্তা ও আপত্তিকর ছবি দ্বারা ব্যঙ্গচিত্র বানিয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তাহেরা আক্তার বলেন,আমার পরিবারের নিকট এসব মানহানীকর সংবাদ আসলে আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু পরিবারের লোকজন আমাকে অনেক বুঝিয়ে সাহস যোগান এবং খুব দ্রæত আমাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেন। নজরুল আহমেদ আমার বিয়ের খবর শুনার পর আরও বেশি হিং¯্র হয়ে তেলেবেগুনে জ¦লে উঠেন। তিনি বিভিন্ন সংবাদকর্মীদের কাছে আমার ব্যক্তিগত গোপন কথাবার্তাসহ আপত্তিকর ছবি ভিডিও সহকারে একতরফাভাবে কাল্পনিক অভিযোগ প্রেরণ করেন। আমার ছবিসহ কোন কোন সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করে সমাজে আমার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেন। নজরুল আহমেদ এর এসব ঘটনার ব্যাপারে আমার পরিবারের লোকজন তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য চাপপ্রয়োগ করে যাচ্ছেন। 

এমতাবস্থায় উক্ত নজরুল আহমেদ এর প্রেরিত কোন উদ্দেশ্যমূলক ব্যঙ্গচিত্র,পর্নোগ্রাফি কিংবা মিথ্যা ও মানহানীকর তথ্য দ্বারা আমার বিরুদ্ধে কেউ যাতে গুজব ও উস্কানীমূলক সংবাদ প্রকাশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেন ঐ শিক্ষিকা।  

পাশাাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন নারীর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যঙ্গচিত্র ও ভিডিও ভাইরালকারী বø্যাকমেইলার ও প্রতারক এবং হুমকীদাতা দেশী বিদেশী এ চক্রটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

খালিদ  সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ৪ এপ্রিল ২০২৪