ঘটনাটা ২০২১ এর ১০ ডিসেম্বরের। গাজীপুরের শ্রীপুর থানার বনখড়িয়া গ্রামের মৃত নায়েব আলীর ছোট ছেলে শরিফুল ইসলাম। বিশ বছর বয়সী এই টগবগে তরুণ ওই দিন খুন হয়েছিল। খুন হওয়ার পরের দিন কারিমা নামের এক সুন্দরীর সাথে তার অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হওয়ার দিন ধার্য্য ছিল। এই রকম একটা শুভ দিনের একদিন আগে কারা কিভাবে এবং কেন তাকে খুন করে জঙ্গলে ফেলে গেল? এই প্রশ্ন জানতে হলে পুরা প্রতিবেদনটি পড়ুন।
১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এলাকাবাসী দেখলো গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টমেন্টের ১ নং চেকপোষ্ট গামী রাস্তার পাশে একটি অটোরিকশা থামানো আছে। এর চালক বা যাত্রীর কোন হদিস নেই। তারা হাক ডাক করে কাউকেই পেলনা।
উৎসুক জনতাদের মধ্য থেকে জনৈক রোমান অটোর পেছনে লেখা মালিকের মোবাইলে দিল রিং। কল পেয়ে অটোরিক্সার মালিক মোঃ মোশারফ হোসেন (৪০) (পিতা-মৃত আব্দুল মজিদ সাং-ভাওয়াল গাজীপুর, থানা-সদর) বিষয়টি অটোচালকের পরিবারকে জানাল।
খবর পেয়ে ১০ ডিসেম্বর সকাল আটটার দিকে অটো চালকের ভাই সেকেন্দার লোকজন নিয়ে ঘটনা স্থলে চলে এলো। তারা সনাক্ত করলো এই অটোরিকশার চালক তার ছোট ভাই শরিফুল। সে গত তার বন্ধু তারেক নিয়ে বিয়ের বাজার করার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি।
অজানা শঙ্কা নিয়ে তার আশপাশের ঝোপ জংগলে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শরিফুলের গলাকাটা লাশ পেয়ে গেল। এরপর পুলিশে খবর গেল। তারা লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠালো।
শরিফুলের বড়ভাই মোঃ সেকেন্দার বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করে। মামলা নং-১৮ তারিখ-১০/১২/২০২১ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ বাংলাদেশ পেনাল কোড। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান।
শরিফুল যে বন্ধুকে নিয়ে বিয়ের বাজার করতে বেরিয়েছিল সেই বন্ধু পলাতক থাকায় জটিল হয়ে উঠলো তদন্ত।
তারপরও পিবিআই তদন্তে গিয়ে জানতে পারলো শরিফুল পেশায় অটো চালক হলেও তার চেহারা ছিল রাজকুমারের মতো। খুন হওয়ার কিছু দিন আগে জয়দেবপুর থানার ভাওয়াল মির্জাপুরের মঞ্জুরুল হকের মেয়ে কারিমার সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই জমে উঠে প্রেম। এই প্রেমের সমাপ্তি ঘটিয়ে খুন হওয়ার ১০/১২ দিন আগে গোপনে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
বিষয়টি জানা জানির পর কারিমার পিতা মঞ্জুরুল হক আনুষ্ঠানিক বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাব অনুসারে ১০/১২/২০২১ তারিখ বিয়ে উঠানোর দিন ধার্য হয়।
এতে বাধ সাধে কারিমার বড় ভাই খোরশেদ আলম। কারণ তার শ্যালক রাজিব কারিমাকে বিয়ে করার জন্য ছিল ব্যকুল। এই ব্যকুলতাকে সমর্থন করে কারিমার বড় ভগ্নিপতি মোঃ রাকিব হোসেন ও মোঃ জুয়েল রানাও কারিমার বিয়ে মেনে নিতে চরম আপত্তি করে। তারা রাজিবের সাথে শলা করে একটি চক্রবদ্ধ হয়ে যায়।
কারিমার বাবা শরিফুলকে জামাই হিসেবে মেনে নেওয়ায় তারা শরিফুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য শরিফুলের ঘনিষ্ট বন্ধু আছমত ওরফে তারেকের সাথে কথা বলে। তারেক টাকার বিনিময়ে শরিফুলকে হত্যার জন্য রাজি হয়ে যায়। এরজন্য সে এক লাখ টাকা দাবি করে। শরিফুলের বিয়ে বিরোধী চক্র তাকে এক লাখ টাকা দেয়।
টাকা পাওয়ার পর শরিফুলের বন্ধু তারেক বিয়ের একদিন আগে (৯ ডিসেম্বর/২১) শরিফুলকে প্রলোভন দিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তাকে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টমেন্টের ১ নং চেকপোষ্ট গামী রাস্তার ডান দিকের সরকারি গজারি বনের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে খুনি চক্রের অন্যান্যদের নিয়ে গাঁজার আসর বসায়। শরিফুলকে গাঁজা খাইয়ে বেহুঁশ করে গলা কেটে হত্যা করে।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2022/01/17-final.jpg)
এই হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী হিসেবে ১৭/১২/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ০৩.৪০ ঘটিকায় বনখড়িয়া এলাকা থেকে আফ্রিদি (১৯), পিতা-মোঃ আমজাদ হোসেন, মাতা-মোছাঃ ছাহেরা খাতুন, সাং-বনখড়িয়া, থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুরকে ইং ১৭/১২/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ০২.৩০ ঘটিকায় বনখড়িয়া এলাকা থেকে মোঃ রাকিব হোসেন (২২), পিতা-মোঃ নিয়ত আলী, মাতা-রাজিয়া বেগম, সাং-বাউপাড়া, থানা-জয়দেবপুর, জেলা-গাজীপুর মোঃ রাজিব শেখ (২২), পিতা-মোঃ হাসান, মাতা-মোছাঃ রাজিয়া বেগম, সাং-দর্জিপাড়া, থানা-ইসলামাপুর, জেলা-জামালপুর বর্তমানে সাং-ভাওয়াল মিজার্পুর ইব্রাহিম এর বাড়ির ভাড়াটিয়া, থানা-জয়দেবপুর, জেলা গাজীপুর মোঃ জুয়েল রানা (২৭), পিতা-শফিকুল ইসলাম, মাতা-দোলেনা খাতুন, সাং-মিছিটেঙ্গী, থানা-গৌরিপুর, জেলা-ময়মনসিংহ বর্তমানে সাং-শিকদার বাড়ী ভিমবাজার, থানা-সদর, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুরদের ইং ১৬/১২/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ২৩.০০ ঘটিকায় ভাওয়াল মিজার্পুর এলাকা থেকে মোঃ হানিফ (২৭), পিতা-মৃহ শাহাজ উদ্দিন, মাতা-মোছাঃ আম্বিয়া, সাং-বনখড়িয়া উত্তর পাড়া, থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুরকে ইং ১৭/১২/২০২১ তারিখ রাত ০১.২০ ঘটিকায় বনখড়িয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা কান্ড। মামলার ধৃত আসামীগণ অর্থের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পরিকল্পনা মাফিক এই নির্মম হত্যা কান্ডটি সংঘটিত করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী আফ্রিদি, মোঃ শফিকুল ইসলাম @ জামাই শফিকুল ইং ১৭/১২/২০২১ তারিখ আদালতে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ভিকটিম শরিফুল হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামী আছমত @ তারেক এর সৎ পিতা আব্দুস সামাদ (৫৫), পিতা-মৃত আক্কাস আলী, সাং-বনখড়িয়া, থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুরকে ১৭/১০/২০২১ খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। উক্ত আঃ সামাদ মামলার ভিকটিম শরিফুল হত্যা কান্ডের সাথে তার স্ত্রীর পূর্বের সন্তান আছমত @ তারেক জড়িত আছে মর্মে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি প্রদান করে।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post